• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

কেমন হবে পরকালের যাত্রা

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৬ আগস্ট ২০২১  

প্রতিটি প্রাণীই মরণশীল। সবাইকেই এই পৃথিবী ছেড়ে পরকালে পাড়ি জমাতে হবে। সেই পরকালের যাত্রা কেমন হবে, তা নির্ভর করবে তাদের দুনিয়ার কর্মের ওপর। যদি আল্লাহর মুমিন বান্দা হয় এবং নেক আমল করে থাকে, তাহলে পরকালের যাত্রা হবে রাজকীয়। আর যদি অবিশ্বাসী হয়, তাহলে পরকালের যাত্রাও হবে অত্যন্ত কষ্টদায়ক ও অপমানজনক।

পরকালীন যাত্রার বর্ণনা দিতে গিয়ে বারা ইবনে আজেব (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যখন কোনো ঈমানদার বান্দা পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়ে আখিরাতের দিকে যাত্রা করে, তখন আকাশ থেকে তার কাছে ফেরেশতা আসে। তাদের চেহারা থাকবে সূর্যের মতো উজ্জ্বল। তাদের সঙ্গে থাকবে জান্নাতের কাফন ও সুগন্ধি। তারা তার চোখ বন্ধ করা পর্যন্ত তার কাছে বসে থাকবে। মৃত্যুর ফেরেশতা এসে তার মাথার কাছে বসবে। সে বলবে, হে সুন্দর আত্মা! তুমি আল্লাহ তাআলার ক্ষমা ও তার সন্তুষ্টির দিকে বেরিয়ে এসো। আত্মা বেরিয়ে আসবে, যেমন বেরিয়ে আসে পানপাত্র থেকে পানির ফোঁটা। সে আত্মাকে গ্রহণ করে এক মুহূর্তের জন্যও ছাড়বে না। অতঃপর তাকে জান্নাতের কাফন পরাবে ও সুগন্ধি লাগাবে। পৃথিবীতে যে মিশক আছে, তা তার চেয়ে বেশি সুগন্ধি ছড়াবে। (তারপর) তাকে নিয়ে তারা (ফেরেশতারা) আসমানের দিকে যেতে থাকবে। আর ফেরেশতাদের প্রতিটি দল বলবে, কে এই পবিত্র আত্মা? তাদের প্রশ্নের জবাবে তারা তার সুন্দর নাম নিয়ে বলবে যে অমুকের ছেলে অমুক। এভাবে প্রথম আসমানে চলে যাবে। তার জন্য প্রথম আসমানের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হবে। এভাবে প্রতিটি আসমান অতিক্রম করে যখন সপ্তম আসমানে যাবে, তখন মহান আল্লাহ বলবেন, ‘আমার বান্দার আমলনামাটা ইল্লিয়িনে লিখে দাও। আর আত্মাটা দুনিয়ায় তার দেহের কাছে পাঠিয়ে দাও।’ এরপর কবরে প্রশ্নোত্তরের জন্য দুজন ফেরেশতা আসবে। তারা প্রশ্ন করবে, তোমার রব কে? সে বলবে আমার রব আল্লাহ। তারা প্রশ্ন করবে, তোমার দ্বিন কী? সে জবাব দেবে, আমার দ্বিন ইসলাম। তারা প্রশ্ন করবে এই ব্যক্তিকে চেনো, যাকে তোমাদের কাছে পাঠানো হয়েছে? সে জবাবে বলবে, সে আল্লাহর রাসুল। তারা বলবে, তুমি কিভাবে জানলে? সে জবাবে বলবে, আমি আল্লাহর কিতাব পাঠ করেছি। তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছি। তাকে সত্য বলে স্বীকার করেছি। তখন আসমান থেকে একজন আহবানকারী বলবে, ‘আমার বান্দা অবশ্যই সত্য বলেছে। তাকে জান্নাতের বিছানা বিছিয়ে দাও। তার কবর থেকে জান্নাতের একটি দরজা খুলে দাও।’

জান্নাতের সুঘ্রাণ ও বাতাস আসতে থাকবে। যত দূর চোখ যায়, তত দূর কবর প্রশস্ত করে দেওয়া হবে। তার কাছে সুন্দর চেহারার সুন্দর পোশাক পরিহিত সুগন্ধি ছড়িয়ে এক ব্যক্তি আসবে। সে তাকে বলবে, তুমি সুসংবাদ নাও। সুখে থাকো। দুনিয়ায় এই দিনের ওয়াদা দেওয়া হচ্ছিল তোমাকে। মৃত ব্যক্তি সুসংবাদদাতা এই ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করবে, তুমি কে? সে জবাবে বলবে, আমি তোমার নেক আমল (সৎকর্ম)। তখন সে বলবে, হে আমার রব! কিয়ামত সংঘটিত করুন! হে আমার রব! কিয়ামত সংঘটিত করুন!! যেন আমি আমার সম্পদ ও পরিবারের কাছে ফিরে যেতে পারি। আর যখন কোনো কাফির দুনিয়া থেকে বিদায় হয়ে আখিরাতপানে যাত্রা করে, তখন তার কাছে কালো চেহারার ফেরেশতা আগমন করে। তার সঙ্গে থাকে চুল দ্বারা তৈরি কষ্টদায়ক কাপড়। তারা চোখ বুজে যাওয়া পর্যন্ত তার কাছে বসে থাকে। এরপর আসে মৃত্যুর ফেরেশতা। তার মাথার কাছে বসে বলে, হে পাপিষ্ট আত্মা! বের হয়ে আল্লাহর ক্রোধ ও গজবের দিকে চলো। তখন তার দেহে প্রচণ্ড কম্পন শুরু হয়। তার আত্মা টেনে বের করা হয়, যেমন—আর্দ্র রেশমের ভেতর থেকে লোহার ব্রাশ বের করা হয়। যখন আত্মা বের করা হয়, তখন এক মুহূর্তের জন্যও ফেরেশতা তাকে ছেড়ে দেয় না। সেই কষ্টদায়ক কাপড় দিয়ে তাকে পেঁচিয়ে ধরে। তার লাশ পৃথিবীতে পড়ে থাকে। আত্মা নিয়ে যখন ওপরে ওঠে, তখন ফেরেশতারা বলতে থাকে কে এই পাপিষ্ট আত্মা? তাদের জবাবে তার নাম উল্লেখ করে বলা হয়—অমুক, অমুকের ছেলে। প্রথম আসমানে গেলে তার জন্য দরজা খোলার অনুরোধ করা হলে দরজা খোলা হয় না।...অতঃপর আল্লাহ তাআলা বলবেন, তার আমলনামা সিজ্জিনে লিখে দাও, যা সর্বনিম্ন স্তর। এরপর তার আত্মাকে পৃথিবীতে নিক্ষেপ করা হবে।...এরপর তার দেহে তার আত্মা চলে আসবে। দুজন ফেরেশতা আসবে। তাকে বসাবে। এরপর তাকে একইভাবে প্রশ্ন করা হবে, তোমার রব কে? তোমার ধর্ম কী? এই ব্যক্তি কে, যাকে তোমাদের মধ্যে পাঠানো হয়েছিল? সব প্রশ্নের জবাবে সে বলবে, হায়! হায়!! আমি জানি না। তখন আসমান থেকে এক আহবানকারী বলবে, সে মিথ্যা বলেছে। তাকে জাহান্নামের বিছানা বিছিয়ে দাও। জাহান্নামের একটি দরজা তার জন্য খুলে দাও। জাহান্নামের তাপ ও বিষাক্ততা তার কাছে আসতে থাকবে। তার জন্য কবরকে এমন সংকুচিত করে দেওয়া হবে, যাতে তার হাড্ডিগুলো আলাদা হয়ে যায়। তার কাছে এক ব্যক্তি আসবে, যার চেহার বিদঘুটে, পোশাক নিকৃষ্ট ও দুর্গন্ধময়। সে তাকে বলবে, যে দিনের খারাপ পরিণতি সম্পর্কে তোমাকে বলা হয়েছিল, তা আজ উপভোগ করো। সে এই বিদঘুটে চেহারার লোকটিকে জিজ্ঞেস করবে, তুমি কে? সে বলবে, আমি তোমার অসৎকর্ম। এরপর সে বলবে, ‘হে রব! আপনি যেন কিয়ামত সংঘটিত না করেন।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ১৮৫৩৪ অবলম্বনে)

মহান আল্লাহ সবাইকে ঈমানি মৃত্যু দান করুন। আমিন।

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –