নায়কের সন্ধানে

রামেন্দু মজুমদার
আজ ২৬ মার্চ। আমাদের স্বাধীনতা দিবস। আজকের দিনে নায়কের কথা উচ্চারিত হলে একজনের নামই মনের পর্দায় ভেসে ওঠে—তিনি আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি শুধু নায়ক নন, শতাব্দীর মহানায়ক। যুগ যুগ ধরে বাঙালির স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার যে আকাঙ্ক্ষা, তাকে তিনি বাস্তব রূপ দিয়েছিলেন। সাধারণ মানুষের পাশে থেকে তাদেরই একজন হয়ে দীর্ঘ গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে তিনিই হয়ে উঠেছিলেন সত্যিকারের নায়ক। পাঠক নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন ‘নায়ক’ বলতে আমি প্রচলিত নাটক বা চলচ্চিত্রের প্রধান অভিনেতাকে বোঝাচ্ছি না। আমাদের আজকের আলোচনার নায়ক সমাজের নায়ক—যাঁকে অনুকরণ করা যায়, অনুসরণ করা যায়।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫২ বছরে বৈষয়িক অগ্রগতির তালিকা বেশ দীর্ঘ। আমাদের অর্থনীতির একটা শক্ত ভিত তৈরি হয়েছে, মানুষের জীবনযাত্রার মান বেড়েছে, শিক্ষার হার বৃদ্ধি পেয়েছে, স্বাস্থ্যসেবাও আগের তুলনায় অনেক ভালো। পৃথিবীর কয়টা দেশ তাদের জনগোষ্ঠীকে বিনা মূল্যে করোনার টিকা প্রদান করতে পেরেছে? স্থাপনার ক্ষেত্রে কয়েকটি চোখ-ধাঁধানো অগ্রগতি হয়েছে। নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতু, ঢাকায় মেট্রো রেল, চট্টগ্রামে কর্ণফুলী টানেল, ঢাকা বিমানবন্দরের নির্মীয়মাণ তৃতীয় টার্মিনাল—সবই গর্ব করার মতো। বিদ্যুৎ উৎপাদন ও গ্রাহক পর্যায়ে তা বিতরণের সাফল্য প্রশংসার দাবিদার। দেশের অভ্যন্তরে সড়ক যোগাযোগ অনেক উন্নত হয়েছে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে ডিজিটাল প্রযুক্তির ক্ষেত্রে, যা আমাদের জীবনমান সম্পূর্ণ বদলে দিয়েছে। উচ্চবিত্ত থেকে শুরু করে গ্রামের নিরক্ষর কৃষকও তাঁদের নিজ নিজ প্রয়োজনে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে উপকৃত হচ্ছেন।
এসব অগ্রগতির একটা বিপরীত চিত্র আমাদের বিষণ্ন করে, শঙ্কিত করে। উন্নয়নের সঙ্গে পাল্লা দিয়েই যেন আমাদের নৈতিক অবক্ষয় হচ্ছে। আমরা এত আত্মকেন্দ্রিক ও ভোগবাদী হয়ে গেছি যে আদর্শ, নীতি-নৈতিকতা, মানবিক বিবেচনা আমাদের কাছে গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে। আমরা দ্রুত উন্নতি করতে চাই, অর্থবিত্তের মালিক হওয়াই এখন আমাদের প্রধান লক্ষ্য। আজ আমাদের সমাজে যাঁদের সফল মানুষ হিসেবে গণ্য করা হয়, তাঁদের বেশির ভাগের এগিয়ে যাওয়ার গল্প কিন্তু গর্ব করার মতো নয়। কিংবা বর্তমান অবস্থায় থেকে তাঁদের নৈতিক অবস্থানও অন্যদের অনুপ্রাণিত করতে পারে না।
আমাদের সমাজের এখন নায়ক কারা? প্রতিপত্তিশালী রাজনীতিক, সফল শিল্পপতি, খ্যাতির শিখরে ওঠা জনপ্রিয় খেলোয়াড়—এঁরাই তো বীরপূজা পেয়ে থাকেন। মাঝেমধ্যে দু-একজন পাঠকপ্রিয় লেখক বা নন্দিত শিল্পীকেও আমরা নায়কের আসনে বসাই। আমরা স্বাভাবিকভাবে প্রত্যাশা করব যে এঁদের জীবনাচরণ তাঁদের মর্যাদার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হবে। কিন্তু বাস্তবে কি তা হচ্ছে?
রাজনীতিতে এখন আদর্শ আর নীতি—দুটি অপরিচিত শব্দ। কোনো আদর্শ সামনে রেখে এখন বেশির ভাগ মানুষ রাজনীতি করেন না। তাঁদের লক্ষ্য থাকে কোন দলে গেলে দ্রুত ক্ষমতায় যাওয়া যাবে, এমপি-মন্ত্রী ইত্যাদি হওয়া যাবে। অথচ আমাদের ছোটবেলায় দেখতাম আদর্শবান মানুষেরাই রাজনীতি করছেন। রাজনীতি মানে ছিল তাঁদের কাছে মানুষের কল্যাণ। সততার সঙ্গে মানুষের সেবা করেছেন তাঁরা। আর আজ? কোনো বিত্তহীন ত্যাগী রাজনীতিবিদের পক্ষে ইউনিয়ন কাউন্সিল থেকে শুরু করে জাতীয় সংসদ পর্যন্ত—কোনো নির্বাচনেই প্রার্থী হওয়া সম্ভব নয়। নির্বাচন করতে আজকাল কয়েক কোটি টাকা লাগে। দলগুলোও এমন ব্যক্তিদের মনোনয়ন দেয় না যাঁদের টাকা খরচ করার ক্ষমতা নেই। তাহলে কোন উদ্দেশ্য নিয়ে জনসেবার নামে প্রার্থীরা কোটি কোটি টাকা ব্যয় করেন? নির্বাচিত হলে তাঁরা এ টাকাটা সুদে-আসলে শুধু নয়, লাভে ফেরত পাবেন—এ বিশ্বাস তাঁদের আছে। তাহলে এভাবে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে আমরা কী করে সততা আর নৈতিকতা আশা করতে পারি? আমরা তাঁদের প্রভাববলয়ে থাকতে পছন্দ করি, তাতে যদি আমার ভাগ্যে কিছু জোটে। আমি কথাগুলো বলছি মোটা দাগে, অবশ্যই সবার ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য নয়।
আমাদের জাতীয় সংসদের বেশির ভাগ সদস্য ব্যবসায়ী। ব্যবসা করা কোনো দোষের নয়। তবে কথা হচ্ছে, যখন নীতি নির্ধারণ করা হয়, তখন ব্যবসায়ী-মন্ত্রী বা ক্ষমতাসীনরা নীতিটা যেন ব্যবসায়ীদের পক্ষে যায়, তা খেয়াল রাখেন। আগে বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদে এক পরিবারের দুজনের বেশি পরিচালক হতে পারতেন না। এখন ব্যাংক মালিকদের চাপে তা বাড়িয়ে করা হয়েছে চারজন। ফল কী হয়েছে তা ব্যাংকিং ক্ষেত্রের বর্তমান অবস্থা দেখলেই আমরা টের পাই।
আমাদের ব্যবসায়ী মহলে কতজন মানুষ আছেন, যাঁদের আমরা শ্রদ্ধা করতে পারি? এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন, যাঁদের সাফল্যের গল্প অন্যদের অনুপ্রাণিত করতে পারে। সৈয়দ মনজুর এলাহী বা প্রয়াত স্যামসন এইচ চৌধুরীর মতো কতজন ব্যবসায়ীকে আমরা ‘নায়ক’ হিসেবে চিহ্নিত করতে পারব—যাঁদের সততা, নিষ্ঠা ও পরিশ্রমের ফলে জীবনে সাফল্য এসেছে? ফলে সত্ভাবে ব্যবসা করে যে জীবনে সফল হওয়া যায়—এ বিশ্বাস আমাদের সমাজ থেকে হারিয়ে গেছে।
এর মাঝেও যাঁরা আজ আমাদের সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে শীর্ষে অবস্থান করছেন, তাঁদের জীবনাচরণ কতটা অনুসরণযোগ্য? একজন বিশ্বনন্দিত খেলোয়াড় যদি শুধু অর্থ বা অন্য কোনো কিছু লাভের আশায় এমন কোনো সংসর্গে জড়ান, যা নিন্দনীয়, তখন আমাদের এই ‘নায়ক’ কি ‘খলনায়ক’ হয়ে ওঠেন না? তিনি যতই খ্যাতি বা দক্ষতা অর্জন করে থাকুন না কেন, তাঁর নৈতিকতা নিয়ে কি আমি প্রশ্ন করব না? তাঁকে কি আমি আগের মতো সম্মান করব, বীরপূজা করব? এসব এখন ভেবে দেখার সময় এসেছে।
আমাদের সমাজে নায়ক হওয়ার কথা সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর মতো একজন শিক্ষাবিদের। যাঁর পাণ্ডিত্য, আজীবন শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা, সামাজিক অনাচারের বিরুদ্ধে সাহসী কণ্ঠস্বর আমাদের অনুপ্রাণিত করে। একজন শিক্ষক কেন এখন সমাজে ‘নায়ক’ হিসেবে বিবেচিত হন না? অবশ্য এর দায় অনেকটা শিক্ষকসমাজকেও নিতে হবে। কোনো চিকিৎসককে কী আমরা সমাজের নায়ক হিসেবে বিবেচনা করি? করোনা অতিমারির সময় তাঁরা নিজেদের জীবন বিপন্ন করে শত শত রোগীর সেবা করে সুস্থ করে তুলেছেন। আমরা তাঁদের নায়ক মনে করি না। একজন সাধারণ মানুষও তাঁর সাধ্য অনুযায়ী পাশের মানুষের উপকার করে আমাদের চোখে নায়ক হয়ে উঠতে পারেন। তাঁরা কখনো মানুষের অকল্যাণ করতে পারেন না।
সমাজের সর্বস্তরে আজ নৈতিকতা ও আদর্শের অবক্ষয়। এ অবক্ষয় যদি আমরা রোধ করতে না পারি, তবে সব বৈষয়িক অগ্রগতি ব্যর্থ হয়ে যাবে। এ কথাটা যত দ্রুত আমরা বুঝতে পারব, তত মঙ্গল।
স্বাধীনতা দিবসে আজ আমরা একবার আমাদের সংবিধানের প্রস্তাবনার দিকে ফিরে তাকাতে চাই, যেখানে বলা হয়েছে :
‘আমাদের রাষ্ট্রের অন্যতম মূল লক্ষ্য হইবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এমন এক শোষণমুক্ত সমাজতান্ত্রিক সমাজের প্রতিষ্ঠা—যেখানে সকল নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত হইবে।’
এসব কাজে নেতৃত্ব দেবেন সমাজের সত্যিকারের নায়করা। আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সুযোগ নিয়ে কখনো এমন অশিক্ষিত, রুচিহীন ভাঁড়কে নায়ক বানিয়ে তুলি, যা আমাদের সমাজকে ভিন্নভাবে প্রতিফলিত করে। আমাদের রুচি ও সংস্কৃতি নিয়ে প্রশ্ন জাগায়। আমরা আশা করব, আমাদের আগামী প্রজন্মের মাঝ থেকেই বেরিয়ে আসবে সেই সব ‘নায়ক’, যাঁদের অন্যরা অনুসরণ করবে। আমাদের চলার পথে অনুপ্রেরণার উৎস হবে সেই নায়করা।
লেখক : সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, অনারারি প্রেসিডেন্ট (ওয়ার্ল্ডওয়াইড), ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউট (আইটিআই)
– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –- এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হতে পারে ১৭ আগস্ট
- নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে আইনমন্ত্রীর বক্তব্য ‘শব্দচয়নে ভুল’
- এক বছরে বিমানের লাভ ৪৩৬ কোটি টাকা: প্রতিমন্ত্রী
- আজ বিশ্ব পরিবেশ দিবস
- আজ থেকে সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ
- শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানির প্রতিবাদে মানববন্ধন
- অভিনেত্রী সুলোচনা মারা গেছেন
- কাবিননামা মার্চেই টুকরো টুকরো করেছে রাজ: পরীমণি
- গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান হলেন আজমত উল্লা
- তুরস্ককে যে অনুরোধ করলেন ন্যাটো মহাসচিব
- ‘শিশুদের হাতে ২০৪১ এর উন্নত বাংলাদেশের চাবিকাঠি’
- মোটরসাইকেলের ধাক্কায় পথচারীর মৃত্যু
- পীরগঞ্জে দুর্নীতি বিরোধী স্কুল বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত
- দূষণমুক্ত নির্মল পরিবেশের বিকল্প নেই: রাষ্ট্রপতি
- পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বৃক্ষের ভূমিকা অনস্বীকার্য: শেখ হাসিনা
- ‘১৮৬ মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণের প্রকল্প নেয়া হয়েছে’
- পেয়ারা চাষে লাখপতি পারভেজ
- রংপুরে বৃষ্টিতে জনজীবনে স্বস্তি
- ‘শিশুদের মেধা বিকাশে সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করতে হবে’
- পুকুরে নেমেই তলিয়ে গেল সোহান
- যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অত্যন্ত চমৎকার
- মিষ্টির দাম কমেছে বলে ডায়াবেটিস বানানো যাবে না: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
- রাতের মধ্যে ঢাকাসহ ১৪ জেলায় ঝড়ের পূর্বাভাস
- কাল থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি
- ‘আমাদের উদ্যোক্তাদের সফলতা দেখে অনেক দেশ অনুপ্রেরণা পায়’
- ‘সংকট সমাধানে আওয়ামী লীগ সরকার দিন-রাত কাজ করছে’
- সরকার ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়ন করতে সক্ষম: প্রধানমন্ত্রী
- স্বাস্থ্য বাজেট আরও একটু বাড়ালে ভালো হতো: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
- একদিনে ডেঙ্গুতে মৃত্যু ৩, হাসপাতালে ভর্তি ৯৭
- ‘বিদেশে পালিয়ে যাওয়া’ নিয়ে যা বললেন ডিবির হারুন
- দেশে গণতন্ত্র ও উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে: রাষ্ট্রপতি
- আন্তর্জাতিক বাজারের কারণে চিনির দাম বেড়েছে: বাণিজ্যমন্ত্রী
- জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৪তম জন্মবার্ষিকী
- বিশ্বনেতা শেখ হাসিনাকে নিয়ে একদিন গবেষণা হবে: শিক্ষামন্ত্রী
- মেঘের গর্জন হলে যে দোয়া পড়বেন
- জুলাইয়ে পরীক্ষামূলক শুরু হচ্ছে সর্বজনীন পেনশন
- এলডিসি উত্তোরণ সম্পর্কিত বাণিজ্যিক চ্যালেঞ্জের উপর কর্মশালা
- ‘বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীদের উচিত শিক্ষা দিতে যুবলীগই যথেষ্ট’
- চিকিৎসা নিতে আর ঢাকায় আসতে হবে না: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
- পরকীয়া-ডিভোর্স, মিথিলার পর রহস্যময় ইঙ্গিত সৃজিতের
- `রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৃষ্টিকর্ম চিরদিন বাঙালিকে অনুপ্রাণিত করবে`
- ইসলামে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জোর তাগিদ
- তৃতীয় মেয়াদে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট হলেন এরদোয়ান
- দুর্নীতি মামলায় আগাম জামিন পেলেন ইমরানের স্ত্রী
- নীলফামারীতে বিদ্যুতের মিটার বিস্ফোরণে পুড়ল ৬ পরিবারের ১১ ঘর
- বর্ষার আগে ফের তাপপ্রবাহের দাপট, থাকবে কয়দিন
- `দুর্ভোগ কমাতে হলে টেকনোলজি আরও আপডেট হতে হবে`
- পাসওয়ার্ড ছাড়াই লগইন করা যাবে গুগল অ্যাকাউন্ট
- উন্নয়নে শেখ হাসিনার বিকল্প নেই: পানিসম্পদ উপমন্ত্রী
- মাটির নিচে দেবে যাচ্ছে নিউইয়র্ক