• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

সর্বশেষ:
বাংলাদেশকে হুমকির মুখে ফেলেছে ক্রমবর্ধমান জলরাশি: গবেষণা উত্তরবঙ্গের মহাসড়কে চার লেন চালু, ঈদযাত্রা হবে স্বস্তির সব উন্নয়ন সহযোগীদের এক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী বিডিএস ভূমি ব্যবস্থাপনায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে: ভূমিমন্ত্রী বিএনপির নিগৃহীত নেতাকর্মীদের তালিকা দিতে হবে: ওবায়দুল কাদের

কারাগারে বঙ্গবন্ধুর ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন যেমন ছিল

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২০ অক্টোবর ২০২১  

ড. আহসান সাইয়েদ

হিজরি সালের তৃতীয় মাস রবিউল আউয়াল বিশ্ববাসীর জন্য রহমতের মাস। সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসুল হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্মমাস। ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ আরবের পবিত্র মক্কা নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন নবীকূল শিরোমণি হজরত মুহাম্মদ (সা.)। যাঁর আগমন নিয়ে কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন—

“অভিনব নাম শুনিল রে ধরা সেদিন—‘মোহাম্মদ!’

এতদিন পরে এল ধরার ‘প্রশংসিত ও প্রেমাস্পদ।’

চাহিয়া রহিল সবিস্ময়ে ইহুদি আর ঈসাই সব,

আসিল কি ফিরে এতদিনে সেই মসীহ মহামানব?” (মরুভাস্কর)

দিনটি পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) নামে পরিচিত। অন্য দেশের মতো বাংলাদেশের মুসলিমদের মনে এ দিনটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ‘কারাগারের রোজনামচা’য় লিখেছেন, ‘আজ মিলাদুন্নবি। জেলখানায় কয়েদিদের ছুটি। বড় বড় কর্মচারীদেরও ছুটি। বড় সাহেবদের আগমন বার্তা নিয়ে কয়েদিরা আজ আর হৈ চৈ করছে না। কয়েকজন লোক নিয়ে আমার ফুলের বাগানের আগাছাগুলো তুলে ফেলতে শুরু করলাম। দেখলাম মিজানকে নিয়ে হাতপাতালে যেতেছে জমাদার সাহেব—মিজানের দাঁতের ব্যথা দেখাবার জন্য। আজ আমাদের দলের একজনকে দেখলাম বহুদিন পরে। এক জেলে থাকি। বেশি হলে ২০০ হাত দূরে হবে। ওদের দশ সেল, আমার দেওয়ালের মাঝে ২৪ ফিট দেওয়াল। আমার ঘরটা দেওয়াল ঘেঁষে, ওদেরটা একটু দূরে। মধ্যে গরুর ঘর আছে। তবু দেখা হওয়ার উপায় নাই। একজন আর একজনকে দূর থেকে শুভেচ্ছা জানান ছাড়া আর কিইবা করতে পারি!’ (কারাগারের রোজনামচা, পৃষ্ঠা ১৪৬, ২ জুলাই, ১৯৬৬, শনিবার)

যেখানে থাকলে মানুষের মন থাকে বিষণ্ন, আর নানা দুশ্চিন্তার জালে আবদ্ধ থাকে কল্পনাশক্তি। সেই কারাগারে বন্দি থাকা অবস্থায় জাতির পিতার মনকে নাড়া দিয়েছে ১২ রবিউল আউয়াল। কেননা এ দিনটির মর্যাদা সম্পূর্ণ আলাদা। এই দিনেই তো জন্মগ্রহণ করেন আমাদের নবীজি (সা.)। বঙ্গবন্ধু কারাগারে থাকাকালীন মিলাদুন্নবী (সা.) সম্পর্কিত উল্লিখিত লেখা প্রমাণ করে এ দেশের মানুষ তথা বিশ্বের আপামর মুসলিম নবীজি (সা.)-এর জন্মদিনকে কতই না আনন্দ ও সম্মানের সঙ্গে প্রতিপালন করেন। মুসলমানরা দিনটিকে অশেষ পুণ্যময় ও বরকতময় দিন হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন।

বলতে গেলে ১২ রবিউল আউয়াল শুধু একটি দিন নয়, এ হলো এক স্বাপ্নিক ছবি, চিরমুক্তির এক আনন্দ উপাখ্যান। এই মাসটি প্রতিবছর ঈমানদারের দুয়ারে নবীজির (সা.) ভালোবাসার বারতা নিয়ে আসে। ফলে বছরের অন্য সময়ের চেয়ে এ মাসে মুমিন-হৃদয়ে নবীপ্রেমের ফলগুধারা বয়ে যায় বহু গুণে। তাই তো দিবসটির গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনুধাবনপূর্বক দিনটি রাষ্ট্রীয়ভাবে ভাব-গাম্ভীর্যের সঙ্গে পালিত হয় এ দেশে।

স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১২ রবিউল আউয়ালকে সরকারিভাবে ছুটি ঘোষণা করেন। তারই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১২ রবিউল আউয়ালকে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) দিবস হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করার ঘোষণা দেন। বর্তমানে বাংলাদেশে মিলাদুন্নবী (সা.) প্রতিবছর রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় পালিত হচ্ছে। এটা আমাদের জন্য আনন্দ ও আশীর্বাদধন্য বিষয়।

লেখক : উপাচার্য, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –