• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
মুজিবনগর সরকারের ভূমিকা ইতিহাসে অনন্য: রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিরা হস্ত‌ক্ষেপ করবে না: ওবায়দুল কাদের লালমনিরহাটে যুবলীগ কর্মীর পায়ের রগ কাটলেন যুবদল নেতা বাসার ছাদ থেকে পড়ে যুবকের রহস্যজনক মৃত্যু ঠাকুরগাঁওয়ে ঈদ-নববর্ষে ১০ জন নিহত, আহত ২ শতাধিক

কভিড-১৯ মহামারি সত্ত্বেও এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৬ আগস্ট ২০২১  

হীরেন পণ্ডিত

বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় এখন দুই হাজার ২২৭ ডলার। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের সুবিধার্থে সরকারের নিরলস প্রচেষ্টার কারণে মূলত দেশের অসাধারণ অর্থনৈতিক সাফল্য সম্ভব হয়েছে। সরল চোখে এটা স্পষ্ট যে দেশের স্থিতিশীল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, প্রাণবন্ত শিল্পক্ষেত্র, পোশাক খাত এবং জনশক্তি রপ্তানি আমাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণগুলোতে একটি বিরাট পরিবর্তন এনেছে। সরকারের অনুকূল নীতি এবং জনগণের কঠোর পরিশ্রমের জন্যই তা সম্ভব হয়েছে। অর্থনীতির গতি বৃদ্ধি পাচ্ছে, জিডিপি ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বৃদ্ধি পাচ্ছে আমাদের মাথাপিছু আয়।

তবে এখনো দেশের মানুষের মধ্যে সম্পদ, স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষার ক্ষেত্রে ব্যাপক বৈষম্য রয়েছে। সমাজের বিভিন্ন অংশের মধ্যে আয়ের বৈষম্য দরিদ্রকে আরো দরিদ্র ও ধনীকে আরো ধনী করে তুলেছে এবং এটি সমাজে এক বৈষম্যমূলক অবস্থার সৃষ্টি করছে। সুতরাং জাতি হিসেবে আমাদের একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য প্রচেষ্টা চালানো উচিত, যেখানে প্রত্যেক নাগরিক দেশের অগ্রগতি ও বিকাশের পেছনে চলা অর্থনৈতিক সুযোগগুলো গ্রহণ করতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি উল্লেখ করেন যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে, অর্থনৈতিক কার্যক্রম নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। ক্ষুধা, দারিদ্র্য, নিরক্ষরতামুক্ত এবং ধর্মনিরপেক্ষ এক সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার কথাও উল্লেখ করেন তিনি। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির প্রশংসা করে তিনি বলেন, কভিড-১৯ মহামারি সত্ত্বেও আমাদের জিডিপি ৫.২৪ শতাংশ উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছি। যখন অনেক উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশ কভিড-১৯ মহামারির কারণে নেতিবাচক অবস্থার সঙ্গে লড়াই করছি। তিনি বলেন, বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ৪৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে এবং দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ, কৃষি উৎপাদন এবং রপ্তানিতে পরিবর্তন এসেছে।

কভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাবের সঙ্গে সঙ্গে এর মোকাবেলায় দেশের সামগ্রিক চিকিৎসাব্যবস্থার গতি বাড়ানোর জন্য স্বাস্থ্য বিভাগে একটি সমন্বিত নিয়ন্ত্রণকক্ষ চালু করা হয়।

এসব কার্যক্রমে যাতে কোনো দুর্নীতি বা অব্যবস্থাপনা না ঘটে এবং কোনো শ্রমিক এবং কৃষক যাতে ক্ষুধার্ত না থাকে সে জন্য তালিকাভুক্ত করে ত্রাণকাজে সহায়তার নির্দেশ দেওয়া হয়। গত এবং চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে ৬৪ জন জেলা প্রশাসক, ৩২৭টি পৌরসভা এবং সিটি করপোরেশনকে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে নগদ অর্থ প্রদান করা হয়েছে। শিশুখাবার কেনার জন্য নগদ অর্থ সরবরাহ করা হয়েছে। কারিগরি, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অধীনে নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী, মাদরাসার শিক্ষক-কর্মচারীদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। এ ছাড়া এতিম ও দুস্থদের জন্য নগদ অর্থ প্রদান করা হয়। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী, টেলিভিশন এবং বেতারের সঙ্গে জড়িত বেকার আদিবাসী শিল্পীসহ অন্য শিল্পী ও কলাকুশলীদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। কভিড-১৯ মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ অতিক্রম করছি আমরা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কভিড-১৯ মহামারি থেকে জীবন বাঁচাতে মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসিত হয়েছেন। মার্কিন প্রভাবশালী ফোর্বস ম্যাগাজিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিভিন্ন উদ্যোগের প্রশংসা করেছে। এর অনুসরণ করে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামও প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকার প্রশংসা করেছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে এবং করোনা পরিচালনা ও টিকা কার্যক্রমের জন্য তাঁর ভূয়সী প্রশংসা করে এবং এই খাতে ৯৪০ মিলিয়ন আর্থিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক টেড্রস আধনাম গ্যাবরিয়াস কভিড-১৯ মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপের প্রশংসা করেন। কভিড-১৯ মহামারি মোকাবেলা করা এবং একই সঙ্গে অর্থনীতিকে সচল রাখা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়, যদিও কভিড-১৯ অভিযোজন এবং অর্থনৈতিক বিকাশকে টেকসই করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্য অনেক দেশের তুলনায় অনেক ভালো অবস্থানে রয়েছে।

এমনকি কভিড-১৯ সময়েও পদ্মা সেতু, মেট্রো রেল প্রকল্প এবং অন্য মেগাপ্রকল্পগুলো কার্যকরভাবে এগিয়ে চলেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব সময় কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েও মনোবল ও বিচক্ষণতার সঙ্গে প্রকল্পগুলো এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ কভিড-১৯ সংকট কাটিয়ে ওঠে এবং অদম্য উন্নয়নে আরো এগিয়ে যাবে।

প্রধানমন্ত্রী জনগণকে আশ্বস্ত করেছিলেন যে তিনি জনগণের জন্য টিকার ব্যবস্থা করবেন। ১৮ আগস্ট পর্যন্ত প্রথম ডোজ পেয়েছেন এক কোটি ৫৫ লাখ ৬৭ হাজার ৩১৮ জন এবং প্রথম ও দ্বিতীয় উভয় ডোজ সম্পন্ন করেছেন ৫৪ লাখ ২৫ হাজার ৩১৯ জন। এরই মধ্যে কভিড-১৯ মহামারি চলাকালীন শেখ হাসিনা তাঁর সুদূরপ্রসারী কর্মপরিকল্পনায় দেশের মানুষের জন্য সব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। উন্নত অনেক দেশ যখন টিকা কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি, তখন প্রধানমন্ত্রীর অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে এই ভ্যাকসিন বাংলাদেশে আসে; এটি একটি অকল্পনীয় সাফল্য। বাংলাদেশ সরকার কভিড-১৯ প্রতিরোধে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্দেশিত ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করছে এবং এ পর্যন্ত কভিড-১৯ খুব ভালোভাবে মোকাবেলা করেছে। একই সঙ্গে অর্থনীতির চাকা সচল রাখার চেষ্টা করছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষতিগ্রস্ত ৩.৭ মিলিয়ন পরিবারের মাঝে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ বিতরণ উদ্বোধন করেন। আদিবাসীদের সরাসরি আর্থিক সহায়তা হলো আরেকটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। প্রধানমন্ত্রী ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার জন্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের পক্ষ থেকে পাঁচ কোটি টাকা প্রদান করেন। এ ছাড়া তিনি বাড়ি নির্মাণে জমি কেনার জন্য ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য নগদ অর্থ প্রদানেরও ব্যবস্থা করেন।

প্রধানমন্ত্রী কৃষি কার্যক্রম দ্রুত গতিশীল রাখার জন্য এবং এক ইঞ্চি জমিও উৎপাদনের উপযোগী না রাখার জন্য এই নির্দেশনা দিচ্ছেন। হাওর অঞ্চলসহ সারা দেশে এক হাজার ৮০০টিরও কম্বাইন্ড হারভেস্টার, ৬০০টি রিপার এবং ২১৫টি রাইজ ট্রান্সপ্লান্টার ৬৯ থেকে ৭০ শতাংশ ভর্তুকি মূল্যে বোরো ফসলের দ্রুততম ফসল সংগ্রহের জন্য উৎপাদন ব্যয় হ্রাস করার একটি নতুন মাত্রা এবং কৃষকদের কষ্ট লাঘব করার জন্য। এ ছাড়া প্রায় ৭২২ লাখ উপকারভোগীর মধ্যে স্বল্পমূল্যে বিএডিসির মাধ্যমে এক হাজার ২৫৯ টন ধানবীজ বিতরণ করা হয়।

তিনি কভিড-১৯ মহামারি মোকাবেলা, অর্থনীতি পুনরুদ্ধার এবং সামাজিক সুরক্ষার জন্য ২৩টি প্রণোদনা প্যাকেজে এক লাখ ২৭ হাজার ৪৪১ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন। এই প্রণোদনা প্যাকেজগুলোর সুবিধাভোগীরা হলো মূলত ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও পরিষেবা খাত, কৃষি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, রপ্তানিমুখী শিল্প, গৃহহীনদের আবাসনসহ বিভিন্ন প্রকল্প। প্রধানমন্ত্রীর বিচক্ষণতার আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো বিভিন্ন সুবিধাভোগী, বিশেষত শ্রমিক শ্রেণির মধ্যে যাঁরা সুবিধাবঞ্চিত অস্থায়ীভাবে বেকার হয়ে পড়েছেন তাঁদের মধ্যে সুবিধাবঞ্চিতদের অন্তর্ভুক্ত করা। ভাসমান মানুষ, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, বিধবা, শ্রমিকসহ সব দুর্দশাগ্রস্ত মানুষকে মানবিক সহায়তা প্রদানের জন্য কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের একটি সমীক্ষায় বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দাকে পরবর্তী দুই বছরের জন্য ব্যবসার ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত করেছে। বর্তমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থার আন্তঃসংযোগ একটি একক দেশের পক্ষে সমৃদ্ধি লাভ প্রায় অসম্ভব করে তুলেছে। দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো দেশের বৈদেশিক মদ্রার মজুদ পৌঁছেছে ৪৮ বিলিয়ন ডলার, যা দিয়ে পরবর্তী ১২ মাসের জন্য আমদানির ব্যয় সামলানো যাবে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো অনুসারে কভিড-১৯ মহামারি সত্ত্বেও গত অর্থবছরে (২০১৯-২০২০) বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৫.২৪ শতাংশ হয়েছে এবং চলতি বছরে ৬.১ শতাংশে পৌঁছবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বুদ্ধিমান নেতৃত্ব এবং দূরদর্শী পরিকল্পনার কারণে এটি সম্ভব হয়েছে।

লেখক : প্রাবন্ধিক

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –