• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

বিএনপির নিয়ন্ত্রণ হাওয়া ভবন-২ সিন্ডিকেটের হাতে

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২১ জানুয়ারি ২০২৩  

বিএনপির নিয়ন্ত্রণ হাওয়া ভবন-২ সিন্ডিকেটের হাতে                            
২০১৩ সালে তারেক রহমানের উপদেষ্টা হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন হুমায়ূন কবীর। তৎকালীন সময়ে বিএনপির অবরোধ কর্মসূচির সময় আমেরিকার ৬ কংগ্রেসম্যানের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে বিবৃতির কথা সবারই মনে আছে। এই স্বাক্ষর জালিয়াতির মূলহোতা ছিলেন হাওয়া ভবন-২ সিন্ডিকেটের প্রভাবশালী সদস্য হুমায়ূন কবীর। যদিও আমেরিকায় আরেক উপদেষ্টা সরদার এফ সাদীকে তখন বহিষ্কার করে মুখ রক্ষার চেষ্টা করেছিল বিএনপি। কিন্তু স্বাক্ষর জালিয়াতির সঙ্গে যুক্তরাজ্যের মূলধারার পত্র-পত্রিকায় হুমায়ূন কবীরের নাম উঠে আসে।

যুক্তরাজ্যে বেড়ে ওঠা হুমায়ূন কবীর এক সময় লেবার পার্টির পূর্ব লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটস-এ একটি ওয়ার্ড শাখার সেক্রেটারি ছিলেন। দলীয় অসদাচরণের কারণে লেবার পার্টি থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়। একরকম ভবঘুরে জীবনযাপন করতেন হুমায়ূন কবীর। পরে তারেক রহমানের উপদেষ্টা ও বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদকের পদ পান। এর বাইরে তার কোনো পরিচিতি নেই।

এই ভবঘুরে হঠাৎ কীভাবে তারেক রহমানের উপদেষ্টা হিসেবে মনোনীত হলেন- এমন প্রশ্ন অনেকের। কারো কারো মতে, এখানে খেল খেলেছেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি আব্দুল মালেক ওরফে ভোঁতা মালেক। গুঞ্জন রয়েছে, ভোঁতা মালেক নাকি অনেক স্নেহ করেন হুমায়ূন কবীরকে।

এদিকে তারেক রহমানের বিশেষ উপদেষ্টা পদ পেয়ে হুমায়ূন কবীরের প্রভাব বেড়ে যায়। দলীয় কাউন্সিলে তাকে প্রথমে সহকারি আন্তর্জাতিক সম্পাদক মনোনীত করা হলেও কোনো অদৃশ্য ইশারায় কয়েকদিনের মাথায় পূর্ণ আন্তর্জাতিক সম্পাদক মনোনয়ন দিতে বাধ্য হয় দল। নিজেকে ভবিষ্যৎ বিএনপি সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পরিচয় দিতে বেশ সাচ্ছ্যন্দবোধ করেন হুমায়ুন কবীর। আগামীতে কাকে কোন দফতরের মন্ত্রী বানাবেন- এমন আলোচনাও করেন এই ভবঘুরে।

লন্ডন বিএনপির নেতাকর্মীরা জানান, হুমায়ূন কবীর কথায় কথায় বাংলাদেশে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের পশ্চাৎদেশে লাথি দিয়ে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন। ত্যাগী কর্মীদের দলে কোনো কদর নেই। তবে হুমায়ূন কবীররা তারেক রহমানের সান্নিধ্যে এসে রাতারাতি দলে প্রভাব অর্জন করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তারেক রহমানের উপদেষ্টা হওয়ার পর হুমায়ূন কবীরের আয়ের উৎস ছিল ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকারের ছেলে নওফেল জমিরের প্রতিষ্ঠিত জমির টেলিকম। প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশে অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতো। তবে ভিওআইপি ব্যবসা বন্ধে বাংলাদেশ সরকারের কঠোর অবস্থানের পর ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায় নওফেল জমিরের। তবে ভিন্ন ব্যবসায় ঢুকেছেন তিনি। এখন মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে খ্যাত। পূর্ব লন্ডনের অলগেইট এলাকায় নিজের রেস্টুরেন্টে বসেই মাদক ব্যবসা চালান নওফেল জমির। এখানেই মাঝেমধ্যে তার সঙ্গে গোপন বৈঠক করতে দেখা যায় তারেক রহমান ও হুমায়ূন কবিরকে।

হাওয়া ভবন-২ সিন্ডিকেটের আরেক সদস্য ইমিগ্রেশন আইনজীবী আবু সায়েম। তিনিও তারেক রহমানের উপদেষ্টা। ক্লায়েন্টদের জাল কাগজ তৈরি করে দেওয়ার অভিযোগে ২০১৪ সালে যুক্তরাজ্য পুলিশ গ্রেফতার করেছিল তাকে। বিএনপিতে হঠাৎ ঢুকে পড়া আবু সায়েমেরও দাপট কম নয়। তিনি এক সময় গণফোরামে ড. কামাল হোসেনের অধীনে আইনজীবী হিসেবে কাজ করেছেন। রাজনীতিতে ড. কামালের ভবিষ্যৎ ভালো না দেখে লন্ডনে পাড়ি জমান। তারপর ভোঁতা মালেকের সাহচর্যে এসে বিএনপির বিভিন্ন দাগি আসামি ও পলাতকদের লন্ডনে স্থায়ী করানোর ধান্দায় নামেন। এক পর্যায়ে অবস্থান শক্ত করতে বিএনপিতে ভেড়েন।

আইনজীবী হিসেবে অত্যন্ত সুচতুর আবু সায়েম একই সঙ্গে যুক্তরাজ্য বিএনপির চিফ এক্সিকিউটিভ আব্দুর রহমান সানির সঙ্গেও সুসম্পর্ক বজায় রেখেছেন। শোনা যায়, সানির মাধ্যমেই তারেকের সান্নিধ্য লাভ করেন এবং এক পর্যায়ে উপদেষ্টার পদ বাগিয়ে নেন। বাংলাদেশে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের ওপরও খবরদারি করেন আবু সায়েম। অনুগতদের কাছে প্রচার করে বেড়ান, দল ক্ষমতায় গেলে তিনিই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হবেন।

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –