• শনিবার ০৪ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২১ ১৪৩১

  • || ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

তিস্তার চর যেন সবুজের সমারোহ 

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪  

শুল্ক মৌসুমে তিস্তা নদীর পানি যেন শূন্য হয়ে জেগে উঠেছে প্রান্তর জুড়ে বালুচর জেগে উঠেছে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বিভিন্ন এলাকার নদীতে। উপজেলার দহগ্রাম ইউনিয়নের তিস্তা, পাটগ্রাম পৌরসভা, জগতবেড় ও জোংড়া ইউনিয়নের ধরলা নদীর প্রায় ১৩০ হেক্টর চরাঞ্চলে চলছে চাষাবাদ।

গত কয়েক বছরের চেয়ে এবার দহগ্রাম ইউনিয়নের তিস্তার চরে কয়েক কোটি টাকার ফসল পেতে যাচ্ছে কৃষকেরা। এ চাষাবাদে কৃষকেরা কয়েক বছরের তুলনায় লাভবান হবে বলে অনেকে ভাবছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র মতে, ‘তিস্তা ও ধরলা নদী বাংলাদেশ ভারতের আন্তঃসীমান্ত নদী। এ নদী দুটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার জেলা হয়ে প্রবাহিত। গতিপথ পরিবর্তন করে লালমনিরহাটের দহগ্রাম ইউনিয়নের বৃহৎ অংশ জুড়ে বয়ে চলেছে তিস্তা। অপরদিকে ভারতের চ্যাংড়াবান্ধা হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে ধরলা নদী। পাটগ্রাম উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের অংশ জুড়ে প্রবাহিত হয়ে আবারও ভারতে ঢুকেছে।’ 

ভারতীয় কর্তৃপক্ষ নানাভাবে এ নদী গুলোর পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে। আবার প্রতিবছরে বর্ষায় অতি বৃষ্টি, পাহাড়ি ঢলে পানি ছেড়ে দেয়। এতে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে নানা ক্ষয়ক্ষতি হয়ে ভোগান্তিতে পড়ে অসংখ্য মানুষ। গত বছরের ৪ অক্টোবরে ছেড়ে দেওয়া তিস্তা নদীর পানিতে দহগ্রামে প্রবল বন্যা দেখা দেয়। প্রতিবছর দহগ্রামের জমি ভেঙে বিলীন হয় তিস্তায়। জেগে ওঠে মাইলের পর মাইল বালুর চর। এসব বালুর চরে এবারে অধিক পলি পড়েছে। জমি ও বালুর চরের দাবিদার স্থানীয় গ্রামবাসীরা এ বছরে অনেক বেশি চাষাবাদ করছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, একরের পর একর আবাদ করা হয়েছে গম, ভুট্টা, আলু, বাদাম, মরিচ, মিষ্টি আলু, মিষ্টি কুমড়া, সরিষাসহ বিভিন্ন শাক সবজি। এসব ফসলে কাজ করছেন কৃষক পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও অন্যান্য কৃষি শ্রমজীবীরা। দিনের শুরু থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খেতের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে এ এলাকার কৃষক ও শ্রমজীবীরা।

তিস্তা নদী অববাহিকা সীমান্তে রয়েছে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীদের (বিএসএফ) বেশ কয়েকটি ক্যাম্প। সবসময় এসব ক্যাম্পের একাধিক টহল দলের সৈনিকেরা পালাবদল করে চরে বাংলাদেশিদের আবাদ করা খেতের পাশেই ভারতীয় অংশে সর্তক প্রহরায় থাকতে দেখা গেছে। 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর পাটগ্রাম উপজেলা কার্যালয় সূত্র জানায়, এবারে উপজেলার দহগ্রাম তিস্তার চর ও জগতবেড় এবং জোংড়া ইউনিয়নের ধরলা নদীর চরাঞ্চলে ভুট্টা আবাদ হচ্ছে ৬৫ হেক্টর জমিতে। একইসাথে গম ২৫ হেক্টর, আলু ১৫ হেক্টর, মিষ্টি কুমড়া ৮ হেক্টর, মরিচ ৬ হেক্টর, চিনাবাদাম ৫ হেক্টর ও মিষ্টি আলু ৪ হেক্টর জমিতে আবাদ হচ্ছে। এতে ১ হাজার ৬৫৩ মেট্রিক টন ফসল উৎপাদন হবে। 

দহগ্রাম মহিম পাড়ার কৃষক সাদ্দাম হোসেন বলেন, তিস্তা নদী যখন ভাঙে তখন ধু ধু বালু পড়ে। আমরা আবাদ করি। এবার বেশি করে আবাদ করতে পেরে আমরা খুব খুশি।’ 

ঐ ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের জয়নাল আবেদিন বলেন, ‘তিস্তা নদী দীর্ঘদিন ধরে ভাঙছে। এবারে পলি বেশি পড়েছে। সবাই বিভিন্ন ফসল আবাদ করেছে, এবারে ক্ষেতে অনেক ভালো হয়েছে। সবার ফলন বেশি হবে আশা করছি।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুল গাফ্ফার বলেন, ‘এবারের মৌসুমে নদীর চর গুলোতে পলিমাটি বেশি পড়েছে। এতে স্থানীয় কৃষকরা সবাই চাষাবাদ করছে। ফসলও বেশ ভালো হয়েছে। ফলনও ভালো হবে। উপজেলা কৃষি কার্যালয় হতে চরাঞ্চলে চাষাবাদে কৃষকদেরকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’  

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –