• শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪ ||

  • শ্রাবণ ১২ ১৪৩১

  • || ১৯ মুহররম ১৪৪৬

সর্বশেষ:
সর্বোচ্চ আদালতের রায়ই আইন হিসেবে গণ্য হবে: জনপ্রশাসনমন্ত্রী। ২৫ জুলাই পর্যন্ত এইচএসসির সব পরীক্ষা স্থগিত।

কালীগঞ্জে অটোরিকশায় পঙ্গু জাহাঙ্গীরের জীবন সংগ্রাম

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৯ আগস্ট ২০২৩  

      
জাহাঙ্গীর হোসেনের বয়স (৪২) বছর। জন্মের পর থেকেই তার দুই পা অচল, শক্তি নেই দুই পায়েই। তাই সংসারের হাল ধরতে শুরু করেন ভিক্ষাবৃত্তি। কিন্তু মানসিক শক্তিতে বলিয়ান পঙ্গু জাহাঙ্গীর এখন ভিক্ষার ঝুলি ফেলে নিজেই উপার্জনের পথ বেঁচে নিয়েছেন। নিজের চেষ্টায় জয় করেছেন শারীরিক অক্ষমতাকেও। সম্মানজনক উপার্জনে এখন অন্তত দু’বেলা খাবার জুটছে তার পরিবারের সদস্যদের।

জাহাঙ্গীর হোসেনের বাড়ি লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার চলবলা ইউনিয়নের খালিশা বারাজান এলাকায়। তার বাবার নাম মৃত ইছাহাক আলী। তিনি একজন দিন মজুর ছিলেন।

সংসারের তিন ভাই এক বোনের মধ্যে জাহাঙ্গীর সবার বড়। বাবা মারা যাওয়ার পর সংসারের খরচ তাকেই বহন করতে হয়। এজন্য পঙ্গু জাহাঙ্গীর পেশা হিসেবে ভিক্ষাবৃত্তি বেছে নেন। এজন্য হুইল চেয়ার মেনেজ করে সারাদিন ভিক্ষা করে যে অর্থ উপার্জন হয় তা দিয়েই সংসারের খরচ মেটায়। এভাবেই চলছিল জাহাঙ্গীরের জীবন সংগ্রাম। কিন্তু তার মনে জেদ আসে সে আর ভিক্ষা করবে না। নিজেই কাজ করে অর্থ উপার্জন করবে। এজন্য সে মানসিকভাবে শক্তি উপার্জন করতে থাকে। আসতে আসতে মাটিতে পা ফেলে হাঁটার চেষ্টা করে। এক সময় সফলও হয় জাহাঙ্গীর। পরে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা চালিয়ে সংসারের হাল ধরেন।

পেটের তাগিদে এখন আর ভাঙ্গা হুইল চেয়ার নিয়ে ভিক্ষার জন্য রাস্তায় নামতে হচ্ছে না। সমাজের লোকদের কাছে আর ভিক্ষা চাইতে হয় না তার। শুনতে হয় না কারও গালমন্দ। ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা চালিয়ে সংসারের আয়ের যোগান হওয়া পঙ্গু জাহাঙ্গীর হোসেন স্বপ্ন দেখছেন এখন ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার। যারা ভিক্ষা করেন তাদেরকেও ভিক্ষা না করার জন্য নিরুউৎসাহ করছেন তিনি।

জানা গেছে, জাহাঙ্গীর হোসেন জন্মের পর থেকেই দুই পা অচল। শক্তি নেই দুই পায়ের। হতদরিদ্র সংসারে তার জন্ম হওয়ায় তেমন চিকিৎসা করার সুযোগ হয়নি জাহাঙ্গীরের পরিবারের। প্রতিবন্ধী অফিস থেকে দেয়া একটি হুইল চেয়ার ছিল তার সম্বল। কোনো রকমে হুইল চেয়ার ভর করে চলাফেরা করতেন তিনি। বিয়ের পর সংসারের হাল ধরতে শুরু করেন ভিক্ষাবৃত্ত। জাহাঙ্গীরের দুই ছেলে, দুই মেয়ে রয়েছে। অভাবের সংসারে ছেলে-মেয়েরা খেয়ে না খেয়ে কষ্টে বড় হচ্ছে।

জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, ভিক্ষা আর করবো না। যে কয়েকদিন বেঁচে থাকবো ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা চালাবো। মানুষের কাছে হাত পেতে খাওয়ার চেয়ে নিজে রোজগার করে খাওয়ার শান্তি আলাদা। অটোরিকশা চালিয়ে প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ শ টাকা রোজগার হচ্ছে তার। তবে ভালো একটি অটোরিকশা কেউ দান করলে আরো বেশি রোজগার হতো। ছেলে মেয়েদের ভালো স্কুলে ভর্তি করে করে পড়াতে পারতাম।

চলবলা ইউপি চেয়ারম্যান ও ও কালিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজু বলেন, জাহাঙ্গীর পঙ্গু হওয়ায় তাকে আমরা একটি হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম। শুনেছি সে এখন ব্যাটারিচালিত অটো রিকশা চালায়। পরিষদ থেকে তাকে যতদূর সম্ভব সহযোগিতা করা হবে। তারপরেও যদি সমাজের বিত্তবানরা তার জন্য এগিয়ে আসে তাহলে তার পরিবারের জন্য উপকার হতো।

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –