• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অন্যতম নকশাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাস, আজ ৭৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন। বন্যায় দুবাই এবং ওমানে বাংলাদেশীসহ ২১ জনের মৃত্যু। আন্তর্জাতিক বাজারে আবারও বাড়ল জ্বালানি তেল ও স্বর্ণের দাম। ইসরায়েলের হামলার পর প্রধান দুটি বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল শুরু। ইসরায়েল পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইরানে।

সন্তানের পড়ার খরচ যোগাতে একটি রিকশা চান জয়নাল

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৩ সেপ্টেম্বর ২০২১  

বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ চালাতে একটি রিকশা চান ভূমিহীন হতদরিদ্র বাবা জয়নাল আবেদীন। জয়নাল আবেদীন লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার সারপুকুর ইউনিয়নের সরলখাঁ মোহাম্মদপুর এলাকার বাসিন্দা।

দুই ছেলে এক মেয়ে ও স্ত্রী আদুরী বেগমকে নিয়ে তার সংসার। বড় ছেলে রাসেল মিয়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র। দ্বিতীয় সন্তান আনিসুর রহমান এসএসসিতে জিপিও-৫ নিয়ে লালমনিরহাট সরকারি কলেজে এইচএসসি প্রথম বর্ষে এবং ছোট মেয়ে জুথি আক্তার পড়ছে স্থানীয় সরলখাঁ উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণিতে।

জানা যায়, রিকশার প্যাডেল ঘুরিয়ে ৫ সদস্যের সংসারের খরচ চালাতেন জয়নাল। গত তিন মাস আগে ঋণের টাকায় কেনা ব্যাটারি চালিত রিকশাটি বিকল হয় যায়। ব্যাটারি নষ্ট হওয়ায় রিকশাটি চালানোর সক্ষমতা ছিল না জয়নালের। আয় বন্ধ হলেও ঋণের কিস্তি ঠিকই গুনতে হয়েছে। এরপর কোনো উপায় না পেয়ে বিকল রিকশাটি ভাংড়ি হিসেবে বিক্রি করে ঋণের টাকা পরিশোধ করেন। ঋণের বোঝা মাথা থেকে নেমে পড়লেও সংসার আর ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ বন্ধ হয়ে পড়ে। এদিকে করোনার কারণে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় ছেলেরাও বাড়িতে ফিরে তার মায়ের সঙ্গে স্থানীয় আবুল বিড়ি ফ্যাক্টরিতে শ্রমিকের কাজ শুরু করেন। এতে করে কোনো রকম চলছে তাদের সংসার। এখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলতে শুরু করেছে। ছেলে-মেয়েরা আর আয় করতে পারবে না। বরং তাদের লেখাপড়ার খরচ যোগান দিতে হবে। এখন সন্তানদের লেখাপড়া বন্ধের উপক্রম হওয়ায় হতাশায় ভুগছেন জয়নাল আদুরী দম্পতি।  

এজন্য সন্তানদের লেখাপড়া আর সংসারের খরচ মেটাতে হতদ্ররিদ্র বাবা জয়নাল খুঁজছেন সেই রিকশা। কিন্তু একটি ব্যাটারি চালিত রিকশা কিনতে ৪০ হাজার টাকা দরকার। রিকশা কেনার জন্য ঋণ করতে বিভিন্ন এনজিওতে ছুটেও কোথাও পাচ্ছেন না ঋণ। তাই সমাজের বিত্তবানদের কাছে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ যোগাতে একটি রিকশা দাবি করেছেন তিনি। যে রিকশার আয়ে আবারও হাসি ফুটবে জয়নাল আদুরী দম্পতির ও মেধাবী সন্তানদের।

জয়নালের ছেলে রাসেল বলেন, বাবার রিকশা বিক্রির পর আমাদের কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় দুই ভাই বিড়ি ফ্যাক্টরিতে কাজ করে সংসার খরচ যোগাতাম। এখন তো বিশ্ববিদ্যালয় খুলেছে আমাকে যেতে হবে। কিন্তু যাওয়ার টাকাও নেই। আর্থিক সহায়তার জন্য অনেক জায়গায় আবেদন করেছি। কোনো ফল পাইনি। বাবাকে একটা রিকশা কিনে দিলে আমাদের পড়ালেখা বন্ধ হবে না। তাই বিত্তবানদের কাছে সহায়তা কামনা করছি।

জয়নাল আবেদীন বলেন, রিকশা চালিয়ে দৈনিক ৫-৬শ’ টাকা আয় হয়। যা দিয়ে সন্তানদের লেখাপড়াসহ সংসার চলতো এখন রিকশা নেই, ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়াও বন্ধ হবে। আমার স্বপ্নটাও মরে যাবে। কেউ একটা রিকশা কিনে দিলে সন্তানদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারবো। সেটা ঋণে হলেও নিতে চান তিনি।

সাপ্টিবাড়ি ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক কৃষিবিদ হযরত আলী বলেন, হতদরিদ্র জয়নাল আবেদীনকে একটি রিকশার ব্যবস্থা করে দিলে তার মেধাবী সন্তানরা ঝরে পড়তো না। সহায়তা পেলে তার সন্তানরা দেশের জন্য জনশক্তিতে পরিণত হবে। তাই সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –