• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

সর্বশেষ:
বাংলাদেশকে হুমকির মুখে ফেলেছে ক্রমবর্ধমান জলরাশি: গবেষণা উত্তরবঙ্গের মহাসড়কে চার লেন চালু, ঈদযাত্রা হবে স্বস্তির সব উন্নয়ন সহযোগীদের এক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী বিডিএস ভূমি ব্যবস্থাপনায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে: ভূমিমন্ত্রী বিএনপির নিগৃহীত নেতাকর্মীদের তালিকা দিতে হবে: ওবায়দুল কাদের

‘শেখ হাসিনা না হইলে হামরা মরি গেইনো হয়’ 

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৩ আগস্ট ২০২১  

লালমনিরহাটের পাটগ্রামের বিলুপ্ত ছিটমহল বাঁশকাটার বাসিন্দা আব্দুস সালাম। বর্তমানে আছেন সদর উপজেলার বিলুপ্ত ভিতরকুটি-বাঁশপচাই ছিটমহলের বাড়িতে। স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে তিনি বলেন, কিচ্ছু পাই নাই তখন। চলাফেরা, হাটবাজার করির পাই নাই, চিকিৎসা পাই নাই। তখন হামরা দোজখোত আছনো (ছিলাম) হামরা (আমরা)।

কথাগুলো বলতে বলতে দুচোখ দিয়ে অশ্রু ঝরে আব্দুস সালামের। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা না হইলে ছিটিমহলের জন্ম নেওয়া পাপেই হামরা মরি গেইনো হয়। উনি না হইলে ছিটমহল বিনিময় হইলো না হয়। হামরা তার কথা কোনো দিন ভুলমো না।

এখন কেমন আছেন? এ প্রশ্নের জবাবে আব্দুস সালাম বলেন, ভারতীয় ছিটমহলে থাকলেও আমরা এতদিন বেঁচে ছিলাম বাংলাদেশের চাল-ডাল খেয়ে। তাই সুযোগ পেয়েও আমরা ওই দেশে না গিয়ে এ দেশেরই নাগরিক হয়েছি। এখন অনেক ভালো আছি। আমাদের এলাকায় এখন পাকা রাস্তা হয়েছে, এসেছে বিদ্যুৎ। বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী ভাতা পাওয়া যাচ্ছে।

২০১৫ সালের ৩১ জুলাই ভারত-বাংলাদেশের স্থলসীমান্ত চুক্তির মাধ্যমে ছিটমহল বিনিময় হয়। এর ফলে বাংলাদেশের চার জেলার অভ্যন্তরে থাকা ১১১টি ভারতীয় ছিটমহল মিশে যায় এ দেশের ভুখণ্ডে। অপরদিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কোচবিহার ও জলপাইগুড়ি জেলার অভ্যন্তরে থাকা ৫১টি বাংলাদেশি ছিটমহল হয়ে যায় ভারতীয় ভুখণ্ডে। চুক্তি অনুযায়ী ছিটমহলবাসীরা নাগরিকত্ব বেছে নেয়ার সুযোগ পান। প্রতিবেশি দেশটির অভ্যন্তরে থাকা বাংলাদেশি ছিটমহলের বাসিন্দারা নাগরিকত্ব নিয়ে এ দেশেও না এলেও ভারতীয় ছিটমহলগুলো থেকে হাজার খানেক মানুষ সে দেশের মূল ভুখণ্ডে চলে যান।

১১১টি ভারতীয় ছিটমহলরে মধ্যে লালমনিরহাট সদর ও হাতীবান্ধায় ছিল দুটি করে ও পাটগ্রাম উপজেলার অভ্যন্তরে ছিল ৫৯টি। এছাড়া কুড়িগ্রামে ১২টি, নীলফামারীতে ৪টি ও পঞ্চগড়ে ছিল ৩৬টি ভারতীয় ছিটমহল। বিনিময় চুক্তি কার্যকরের পর থেকেই লালমনিরহাটে যুক্ত হওয়া ছিটমহলগুলোতে শুরু হয় ব্যাপক উন্নয়ন। এ দেশের নাগরকিত্ব গ্রহণকারী পিছিয়ে পড়া মানুষগুলোর মৌলিক অধিকারগুলো বাস্তবায়নে দ্রুত কাজ করে সরকার। সেসব এলাকায় হয়েছে পাকা রাস্তা, এসেছে বিদ্যুৎ। ঘরে ঘরে পৗেঁছে দেওয়া হয়েছে সৌরবিদ্যুৎ, বসানো হয় টয়লেট, নলকূপ। হয়েছে একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, শহীদ মিনার। সেচের জন্য বসানো হয়েছে সৌরবিদ্যুত চালিত পাম্প। বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধীদের নিয়ে আসা হয়েছে ভাতার আওতায়। সবমিলিয়ে এখন বেশ সুখেই আছেন সাবেক ছিটমহলবাসীরা।

হাতীবান্ধা উপজেলার উত্তর গোতামারী গ্রামের (বিলুপ্ত ছিটমহল) স্কুলশিক্ষক বকুল চন্দ্র রায়ের স্ত্রী শান্তনা রানী রায় বলেন, আগে বিদ্যুৎ-রাস্তাঘাট ছিল না, ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার সুযোগ ছিল না। এখন এসব সুবিধা পাচ্ছি, আমরা ভালো আছি।

বৃদ্ধ মজিবর রহমান বলেন, আগে কঠিন অবস্থায় ছিলাম আমরা। না যেতে পেরেছি ভারতে, না পেয়েছি বাংলাদেশের কোনো সুযোগ সুবিধা। এখন অনেক সুখে আছি, ভোট দিতে পারছি, সব সুবিধা পাচ্ছি।

কলেজ শিক্ষার্থী আল আমিন বলেন, এখন আমাদের লেখাপড়ার কোনো সমস্যা নেই।

একইভাবে নিজেদের অনুভূতি প্রকাশ করেছেন পাটগ্রামের বাঁশকাটা, লতামারি, পানিশালাসহ একাধিক বিলুপ্ত ছিটমহলের বাসিন্দারা।

পাটগ্রামের ইউএনও সাইফুর রহমান জানান, বিলুপ্ত বাঁশকাটা ছিটমহলের বাসিন্দারা ৩১ জুলাই রাত ১২টা ১ মিনিটে কেক কেটে ও মোমবাতি জ্বালিয়ে ছিটমহল বিনিময় দিবস পালন করেছেন। ১ আগস্ট লালমনিরহাটের বিলুপ্ত ছিটমহলগুলোতে সারাদিন জাতীয় পতাকা উত্তোলনসহ নানা কর্মসূচি পালন করা হয়।

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –