লালমনিরহাটে রেকর্ড সংখ্যক করোনা রোগী শনাক্ত, মোট মৃত্যু ১৮ জন   

লালমনিরহাটে হু হু করে বাড়ছে করোনা পজেটিভ রোগীর সংখ্যা। এক দিনেই ১৫৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৪১ জনের শরীরে মিললো নভেল করোনা ভাইরাস পজেটিভ।

গতকাল বৃহস্পতিবার (১৭ জুন) পূর্বের যে কোনো সময়ের রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ সংখ্যক ১৫৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৪১ জনের শরীরে নভেল করোনা ভাইরাস পজেটিভ শনাক্ত করা হয়েছে। এর আগে গত ৮ জুন ৪৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১৬ জনের শরীরে নভেল করোনা ভাইরাস পজেটিভ রোগী শনাক্ত করা হয়েছিল। নভেল করোনা ভাইরাসের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত জেলায় নভেল করোনা ভাইরাস পজেটিভ হয়ে মোট ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টায় লালমনিরহাট সিভিল সার্জন ডাঃ নির্মলেন্দু রায় এসব তথ্য নিশ্চিত করেনে।

লালমনিরহাট সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী পরিসংখ্যান কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান জানান, বৃহস্পতিবার ১৫৩ জনের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্টে ৪১ জনের শরীরে নভেল করোনা ভাইরাস পজেটিভ রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। এটিই লালমনিরহাট জেলায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ রেকর্ড সংখ্যক নভেল করোনা ভাইরাস পজেটিভ রোগীর সংখ্যা। এর আগে গত ৮ জুন সর্বোচ্চ সংখ্যক ১৬জন নভেল করোনা ভাইরাস পজেটিভ রোগী শনাক্ত হয়েছিল। জুন মাস থেকে প্রতিদিন করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়ছেই।

তিনি আরো জানান, এখন পর্যন্ত জেলায় করোনা ভাইরাস পজেটিভ হয়ে ১৮ জনের মৃত্যু, জেলায় ৬ হাজার ৮৭২ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানোর পর ৬ হাজার ৭৩৪ জনের নমুনা পরীক্ষার ফলাফল পাওয়া গেছে। এতে ১ হাজার ২৬৮ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস পজেটিভ শনাক্ত হলেও সুস্থ্য হয়ে বাড়ীতে ফিরেছে ১ হাজার ৮১ জন। মোট মৃত্যু ১৮জন। এছাড়া ৬৮ জন করোনা পজেটিভ ব্যক্তির মধ্যে ১৬৯ জন আইসোলেশনে রয়েছে। এরমধ্যে ১৫০ জন হোম আইসোলেশন ও ১৯জন প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে রয়েছে। বর্তমানে লালমনিরহাট সদরে ৫৯৫জন, আদিতমারীতে ২০৫জন, কালীগঞ্জে ১৫জন, হাতীবান্ধায় ১০জন ও পাটগ্রাম উপজেলায় ২০জন হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছে।  

লালমনিরহাট সিভিল সার্জন ডাঃ নির্মলেন্দু রায় বলেন, ‘এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ করোনা পজেটিভ রোগী শনাক্ত হয়েছে বৃহস্পতিবার ৪১জন। এর আগে গত ৮জুন ১৬ জন করোনা পজেটিভ রোগী শনাক্ত হয়েছিল। পূর্বের যে কোন সময়ের তুলনায় বর্তমানে লালমনিরহাট সদরে করোনা রোগী বৃদ্ধি পাচ্ছে। জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য কিছু টেকনিক্যাল বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এছাড়াও লালমনিরহাট সদর উপজেলাকে লকডাউন দেওয়া যায় কি না তা চিন্তা ভাবনা করে দেখা হচ্ছে।’
   
জানতে চাইলে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় বলেন, ‘সীমান্তবর্তী লালমনিরহাটে করোনার তেমন কোন প্রভাব নেই। আমরা গত বছর দেখেছি লালমনিরহাট পৌরসভার এলাকার মধ্যেই করোনা পজেটিভ শনাক্তের হার সবচেয়ে বেশি ছিল। এবারও তাই দেখা যাচ্ছে। সাধারণ মানুষের মাঝে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে আমরা করিগরি কমিটির সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করছি। এছাড়া লালমনিরহাট সদরে করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় লকডাউন দেওয়া যায় কি না, এ বিষয়ে জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটিতে আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’  

উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ৯ এপ্রিল প্রথম নমুনা সংগ্রহ করে ১১ এপ্রিল ঢাকা ফেরত রাজমিস্ত্রি কামরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির শরীরে নভেল করোনা ভাইরাস পজেটিভ প্রথম শনাক্ত করা হয়। তার ছেলে সালমান হোসেন দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে ১৪ এপ্রিল নভেল করোনা ভাইরাস পজেটিভ শনাক্ত করা হয়। গত ৮ জুন সর্বোচ্চ সংখ্যক ৪৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১৬ জনের শরীরে নভেল করোনা ভাইরাস পজেটিভ রোগী শনাক্ত করা হয়।