• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

পড়তে বসলেই ঘুম? জানুন তন্দ্রা তাড়ানোর দারুণ কৌশল   

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৩ অক্টোবর ২০২১  

সারাদিন হাজারো চেষ্টা করে ঘুম না আসলেও দেখা যায় পড়ার সময় ঠিকই ঝিমুনি শুরু হয়ে যায়। মনে হয় পড়তে বসলেই রাজ্যের ঘুম চোখে এসে বসে। পড়তে বসে ঘুম আসেনি এমন ব্যক্তি খুঁজে পাওয়া সত্যি খুব কঠিন। ছাত্রজীবনে এই ঘুমের জন্য অনেকের পরীক্ষাও খারাপ হওয়ার ঘটনা বিরল নয়।  

এই সমস্যা এখনো রয়ে গেছে। বর্তমান যুগের ছাত্র-ছাত্রীদেরও এই সমস্যা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে কীভাবে পড়ার সময় ঘুম আসা বন্ধ করবেন তা নিয়ে চিন্তার শেষ থাকে না। তবে কিছু কৌশল জানা থাকলে আপনি খুব সহজেই এই সমস্যা থেকে পরিত্রান পেতে পারেন। পড়াশোনার সময় কীভাবে ঘুম আসা বন্ধ করবেন তার ১৭টি ব্যবহারিক পদ্ধতি আলোচনা করা হলো। এই ১৭টি পদ্ধতি আপনাকে পরীক্ষার আগে জেগে থাকতে সাহায্য করবে।

পর্যাপ্ত পানি পান করুন
পড়াশোনার সময় আপনি ঘুমিয়ে পড়ার আরেকটি কারণ হলো আপনি পর্যাপ্ত পানি পান করছেন না। তবে একটি গবেষণার হিসাবে, ডিহাইড্রেশন আক্ষরিকভাবে আপনার মস্তিষ্ককে সঙ্কুচিত করতে পারে! পড়ার সময় পর্যাপ্ত পানি না পান করলে আপনি মনোযোগ হারাতে পারেন। এটি মোকাবেলা করতে, আপনার পড়ার টেবিলে সবসময় ঠাণ্ডা পানির একটি বোতল রাখুন এবং সারা দিন একটু একটু করে চুমুক দিন। আপনার প্রতিদিন ২ লিটার পানি পান করা উচিৎ। আপনি একটি ২ লিটারের বোতলে পানি ভরে রাখতে পারেন এবং ঘুমানোর আগে সেটি শেষ করে ঘুমাতে পারেন।

প্রয়োজন ভালো ঘুম
পড়াশোনার সময় ঘুম আসার প্রধান কারণ রাতে পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া। সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রতি রাতে অন্তত ৭ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমানো বাধ্যতামূলক। অতিরিক্ত ঘুমাবেন না বা কমও ঘুমাবেন না এবং একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানোর অভ্যাস করুন। এর ফলে প্রতিরাতে একই সময়ে ঘুম আসবে আপনার।

খেতে হবে স্বাস্থ্যকর খাবার
পড়াশোনার সময় নিজেকে ঘুমিয়ে পড়া থেকে বিরত রাখতে, পুষ্টি এবং ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। পাশাপাশি সালাদ, মসুর ডাল এবং প্রচুর ফল ও শাকসব্জি সমৃদ্ধ একটি সুষম এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্য তালিকা তৈরি করুন। সাধারণত যে খাবারে মেদ বেশি থাকে তা আমাদের তন্দ্রাচ্ছন্ন এবং অলস করে ফেলে। তবে চর্বিযুক্ত প্রোটিনগুলি শক্তির জন্য দুর্দান্ত। পাশাপাশি বাদাম এবং বীজের তৈরি একটি এনার্জি বার খেতে পারেন।

নিতে হবে পাওয়ার ন্যাপ
পড়তে পড়তে যখনই আপনার খুব ঘুম লাগবে তখনই বিরতি দিন এবং ২০ থেকে ৩০ মিনিটের একটি পাওয়ার ন্যাপ নিয়ে নিন। পরীক্ষার সময় রাতে যদি প্রয়োজনীয় পরিমাণে ঘুম না হয় তবে আপনাকে দিনের মাঝামাঝি সময়ে একটু ঘুমিয়ে নিতে হবে। এই ঘুম আপনাকে জেগে ওঠার পরে পড়ায় মনোযোগ দিতে সহায়তা করবে।

টেবিল থেকে উঠুন এবং কিছুক্ষণ ঘোরাফেরা করুন
পাওয়ার ন্যাপ নেয়া ছাড়াও, পড়াশোনার সময় আপনি যদি ঘুম অনুভব করেন তাহলে কিছুক্ষণের জন্য হাটাহাটি করতে পারেন। বা আপনার প্রিয় গান ছেড়ে নাচতে পারেন। বাইরে থেকে ১০ মিনিটের জন্য ঘুরে আসতে পারেন। এমনকি আপনার ঘরে হেঁটে হেঁটে বইটি নিয়ে পড়াশোনা করতে পারেন।

একটানা অনেকক্ষণ পড়া যাবে না
অনেকেই একটানা ৫-৬ ঘন্টা পড়ার কথা বলে তবে মনোযোগ না হারিয়ে এটি করা প্রায় অসম্ভব। একটানা সর্বোচ্চ ২ ঘন্টার বেশি পড়া উচিৎ নয়। প্রতি ২ঘন্টা পরপর বা ২৫ মিনিট পড়ার পরে ৫ মিনিটের বিরতি নিতে হবে। এই ৫ মিনিটে আপনি শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যাম করতে পরেন। বা প্রতি ২ ঘন্টা পরে আপনি প্রায় ২০ মিনিটের দীর্ঘ বিরতিও নিতে পারেন।

জোরে জোরে পড়ুন এবং বেশিবেশি লিখুন
জোরে জোরে পড়া আপনাকে মনে মনে পড়ার চেয়ে আরো বেশি ব্যস্ত রাখতে পারে যা আপনাকে পড়াশোনার সময় না ঘুমাতে সাহায্য করবে। এছাড়া একটি রাফ খাতা আপনার পাশে রাখুন এতে আপনি যা পড়ছেন তার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো লিখে রাখতে পারেন। আপনার নোটগুলি মুখস্থ করার জন্য এটিই সেরা উপায় নয়, এটি আপনার শরীরকে ব্যস্ত রাখবে এবং আপনাকে জাগিয়ে রাখবে।

আপনার পড়ার বিষয়গুলো ঘুরিয়ে ফিরিয়ে পড়ুন
কখনো কখনো একই বিষয় খুব দীর্ঘ সময় পড়লে আপনার ঘুম আসতে পারে। পড়তে পড়তে ঘুম আসলে অন্য কোনো বিষয় পড়ুন বা  আপনার পছন্দের বিষয়ও পড়তে পারেন। এছাড়া, গভীর রাতে জটিল বিষয়গুলি না পড়াই ভালো।

পড়ার সময় আরাম করা যাবে না
পড়াশোনার সময় ঘুমিয়ে যাওয়ার একটা বড় কারণ খুব স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করা। এক্ষেত্রে আপনার বিছানায় পড়াশোনা না করা উচিত। আপনার পড়ার যায়গা এবং ঘুমানোর যায়গা আলাদা রাখুন। এর ফলে আপনার মস্তিষ্ক দুটির মধ্যে পার্থক্য করতে পারবে।

ঘন ঘন মুখ ধোয়া
জেগে থাকার সর্বাধিক ব্যবহারিক একটি উপায় হলো যখনই ঘুম পাচ্ছে তখনই মুখ ধুয়ে নেয়া। এটি অন্যতম পরীক্ষিত পদ্ধতি এবং এটি সম্ভবত অভিভাবকরা সবচেয়ে বেশি পরামর্শ দিয়ে থাকেন। যখনই আপনার চোখ ভারী লাগবে ঠাণ্ডা পানিতে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এছাড়া আপনি  দাঁত ব্রাশও করতে পারেন। 

নিজের সঙ্গে কথা বলুন
নিজের সঙ্গে কথা বলা পাগলামির মত শোনাতে পারে তবে এটি সত্যিই কার্যকর। নিজেকে জাগ্রত রাখতে পড়াশোনার সময় নিজের সঙ্গে কথা বলুন। নিচের বাক্যগুলো আপনার আত্মবিশ্বাসকে বাড়িয়ে তুলতে পারে এবং আপনাকে আরো বেশি কেন্দ্রীভূত করতে পারে –

“আমি আগামীকাল পরীক্ষায় টেক্কা দিতে যাচ্ছি!”, “আমি খুব ভালো প্রস্তুত, আমি নিশ্চিতভাবে ৯০-আপ পাব!”

আপনার চোখকে বিশ্রাম দিন
আমরা এখন কেবল বই এবং নোটবুক থেকে পড়াশোনা করি না। এটি ডিজিটাল যুগ এবং অনেক শিক্ষার্থী অনলাইনে বক্তৃতার দিকে নজর রাখছে বা নোট পড়তে কম্পিউটারের স্ক্রিনে ঘন্টার পর ঘন্টা কাটাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা প্রতি ২০ মিনিটে কম্পিউটারের পর্দা থেকে দূরে সরে যাওয়ার পরামর্শ দেন।

কিছু গান শুনতে পারেন
আপনি পড়ার সময় কিছু সংগীতও রাখতে পারেন যা আপনার মস্তিষ্কের তরঙ্গগুলিকে ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করবে। পড়তে পড়তে ঘুমপেলে আপনি গান পরিবর্তনও করতে পারেন।

আকুপ্রেশার চেষ্টা করুন
যখন আপনি খুব নিদ্রাহীন বোধ শুরু করেন, তখন মানব দেহের ৫টি কেন্দ্রে চাপ দিতে পারেন। পয়েন্টগুলি আপনার মাথার উপরের অংশে, আপনার হাতের পেছনে, হাঁটুর নিচে, আপনার ঘাড়ের পেছনের অংশের উপরে অবস্থিত। চাপ দেওয়ার জন্য একটি সংক্ষিপ্ত বিরতি নিতে পারেন। এটির ফলে আপনার ক্লান্তিদূর হবে এবং পড়ার শক্তি ফিরে পাবেন।

চুইংগাম খেতে পারেন
চুইংগাম আপনার দাঁতগুলির জন্য খুব খারাপ তবে আপনার পড়ার সময় সঙ্গে একটি প্যাকেট রাখতে পারেন। এবং  ঘুম আসলে এটি খেতে পারেন। আপনার মুখ যদি অবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করে তবে পড়ায় মনোযোগ হারানোর ঝুঁকি কম রয়েছে।

ক্যাফিনেটেড পানীয় পান করতে পারেন
কফি বা অন্যান্য পানীয় পান করতে পারেন। এটি আপনার শক্তিকে বাড়িয়ে তুলতে পারে তবে মাথায় রাখা উচিত যে এ এনার্জি অল্পের জন্য স্থায়ী হতে পারে। তাছাড়া খুব বেশি ক্যাফিন আপনার পক্ষে খারাপ। আপনার একদিনে ৫০০-৬০০ মিলিগ্রামের বেশি ক্যাফিন পান করা উচিত নয়।

অন্যদের সঙ্গে অধ্যয়ণ
যদি আপনি একা অধ্যয়ন না করেন তবে সম্ভাবনা রয়েছে যে আপনার ঘুম কম পাবে। একদল বন্ধুবান্ধব নিয়ে পড়াশোনা বিভ্রান্তিকর হতে পারে তবে পরীক্ষার জন্য এটি আরো ভালভাবে আপনাকে সহায়তা করতে পারে। আপনার বন্ধুরা আপনাকে প্রস্তুতি নিয়ে কুইজ করতে পারে বা এমন ধারণাটি বুঝতে সহায়তা করতে পারে যা আপনার কাছে এখনো পরিষ্কার নয়।

সূত্র: ইন্ডিয়া টুডে।

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –