• মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১০ ১৪৩১

  • || ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
যুদ্ধের অর্থ জলবায়ু পরিবর্তনে ব্যয় হলে বিশ্ব রক্ষা পেত- প্রধানমন্ত্রী দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড মেডিকেল কলেজের ক্লাস অনলাইনে নেয়ার নির্দেশ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ‘গণতান্ত্রিক রীতিনীতি না মানলে জনগণই বিএনপিকে প্রতিহত করবে’ লালমনিরহাটে হত্যা মামলায় বিএনপির দুই নেতা কারাগারে

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইমরান খান শেষ যে আদেশ দিয়েছিলেন

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১০ এপ্রিল ২০২২  

পাকিস্তানের ইতিহাসে অনাস্থা ভোটে হেরে যাওয়া প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নাম লেখালেন ইমরান খান। শনিবার মধ্যরাতে অনাস্থা ভোটে হেরে যান তিনি। দেশটির ইতিহাসে অনাস্থা ভোটে হেরে কোনো প্রধানমন্ত্রী পদ হারাননি। রীতি অনুযায়ী তাই ছাড়তে হয়েছে তাকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। 

শনিবার কার্যালয় ত্যাগের আগে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইমরানের শেষ আদেশ নিয়ে কথা বলেছিলেন তারই রাজনৈতিক যোগাযোগ-সংক্রান্ত বিশেষ সহকারী শাহবাজ শরিফ।

সংবাদমাধ্যম জিও নিউজের খবরে জানা গেছে, ইমরান খানের শেষ আদেশ নিয়ে টুইটারে একটি পোস্ট করেন শাহবাজ শরিফ।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ছাড়ার আগে ইমরান তার মুখ্য সচিব আজম খানকে ‘অ্যাস্টাবলিশমেন্ট ডিভিশনে’ বদলির নির্দেশ দেন। অ্যাস্টাবলিশমেন্ট ডিভিশন পাকিস্তান সরকারের মানবসম্পদবিষয়ক শাখা।

টুইটারে শাহবাজ লেখেন, আজম খানের পেশাদারির প্রশংসা করেছেন ইমরান খান। এছাড়া ‘চূড়ান্ত সততা ও অধ্যবসায়ের’ সঙ্গে দায়িত্ব পালনের জন্য তার কাজের স্বীকৃতি দিয়েছেন।

আজম খানের বদলির আদেশ-সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিবালয়ের ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর সচিব হিসেবে কর্মরত আজম খানকে অ্যাস্টাবলিশমেন্ট ডিভিশনে বদলি করা হলো। এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।

শনিবার পাকিস্তানের স্থানীয় সময় রাত ১২টার দিকে অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটি শুরু হয়। এর কিছু সময় পর ভোটের ফলাফল ঘোষণা করা হয়। পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে পড়েছে ১৭৪টি ভোট। ৩৪২ আসনের জাতীয় পরিষদে প্রস্তাবটি পাসের জন্য দরকার ছিল ১৭২ ভোট। ফলে মধ্যরাতের নাটক শেষে পতন হল ইমরান সরকারের। ধোপে টিকল না ইমরানের বিদেশি চক্রান্তের তত্ত্বও।

তবে ফলাফল আগে থেকেই আঁচ করেছিলেন তিনি। তাই অনাস্থা ভোটের প্রক্রিয়া শুরুর মুখেই প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ছেড়ে হেলিকপ্টারে চেপে ইসলামাবাদ ছেড়েছেন ইমরান।

কূটনীতিবিদদের একাংশের ধারণা, ইমরানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলার শুনানি হতে পারে। পাকিস্তান ক্রিকেট দলের সাবেক ক্যাপ্টেন ইমরান গ্রেফতারও হতে পারেন বলেও মনে করা হচ্ছে।

নতুন প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে থাকা শাহবাজ শরিফ ফলপ্রকাশের পর পরই জানিয়েছেন, বদলার রাজনীতিতে বিশ্বাসী নন তিনি। ‘পুরনো পাকিস্তানকে স্বাগত’ বলে আনন্দ প্রকাশ করেন অন্যতম বিরোধী নেতা বিলাবল ভুট্টো।

উল্লেখ্য, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মতো শনিবার রাত ১২টার মধ্যে অনাস্থা ভোট শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে উপস্থিতই হননি ইমরান।

প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন থেকে ফিরে ইস্তফা দেন অ্যাসেম্বলির স্পিকার আসাদ কাইজার। ইমরানের সঙ্গে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ করতে পারবেন না জানিয়ে পদ থেকে ইস্তফা দেন তিনি।

নতুন স্পিকার মনোনীত হন সরদার আয়াজ সাদিক। এর পরেই শুরু হয় ভোটাভুটির প্রক্রিয়া। তবে শুরু হয়েই আবার চার মিনিটের জন্য স্থগিত হয় অধিবেশন। এর পর আবার রাত ১২টা ৩২ মিনিটে অনাস্থা ভোটের প্রক্রিয়া শুরু হয়।

নিজের ভাগ্য সম্পর্কে আগে থেকেই একটু হলেও অবগত থাকা ইমরান সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, কোনো মতেই রাজনীতির ময়দান ছাড়বেন না। শেষ বল অবধি লড়াই করে যাবেন। সেই অনুযায়ী লড়াই করেওছেন তিনি। ইতিমধ্যেই ইমরান সমর্থকেরা রাস্তায় নেমে পুরো ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ প্রদর্শন শুরু করেছেন।

পাশাপাশি, সুপ্রিম কোর্টের তরফে নির্দেশিকা জারি করে কড়া বার্তা দেওয়া হয়েছে যে, দেশ ছাড়তে পারবেন না তেহরিক-ই-ইনসাফ দলের কোনও নেতা। তাই এখনই দেশ ছেড়ে যেতে পারবেন না ইমরানও।

১৯৪৭ থেকে কোনও প্রধানমন্ত্রীই পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি। পারলেন না ইমরানও। অক্ষুণ্ণ থাকল ইতিহাসের ধারা। তবে পূর্ণ মেয়াদে বহাল থাকতে না পারলেও কেয়ারটেকার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন অনেকে। সেই ইতিহাসেরই যেন পুনর্নির্মাণ হল।

রাজনৈতিক জীবন একেবারে ছোটও নয় ইমরানের। ১৯৯২ সালে ক্রিকেট বিশ্বকাপ জয়ের পর ১৯৯৬ সালে রাজনীতির ময়দানে আসেন। দুর্নীতি বিরোধী স্লোগান তুলে ১৯৯৬ সালের এপ্রিলে প্রতিষ্ঠা করেন তার দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ।

পরের বছর ১৯৯৭ সালে তিনি নির্বাচনে দু’টি আসন মিয়াওয়ালি এবং লাহোর থেকে দাঁড়ালেও হেরে যান। তবে তাতে থামেননি। ২০০২ সালে মিয়াওয়ালি থেকে জয়ী হন।

প্রথমে সেনাপ্রধান পারভেজ মুশারফকে সমর্থন দিলেও ২০০৭ সালে ৮৫ জন পার্লামেন্ট সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে পদত্যাগ করেন ইমরান। সে বারের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট হয়ে মুশারফ পাকিস্তানে জরুরি অবস্থা জারি করেন। গৃহবন্দী করা হয় ইমরানকে। কিছুদিন হাজতবাসও করতে হয়।

তবে রাজনৈতিক লড়াই চলতেই থাকে। ২০১৩ সালে পাকিস্তানের দশম নির্বাচনে তার দল দ্বিতীয় বৃহত্তম হয় আর ২০১৮ সালের ২৫ জুলাই পাকিস্তানের একাদশ জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে ক্ষমতায় আসে। ১৮ অগস্ট প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। চার বছর পূর্ণ হওয়ার অনেকটা আগেই প্রধানমন্ত্রীর আসন ছাড়তে হল তাকে।

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –