• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
ছয়দিনের সফরে ব্যাংককে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী গরমে ‘অতি উচ্চ ঝুঁকিতে’ বাংলাদেশের শিশুরা: ইউনিসেফ গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা: বেরোবি কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী ৩১ হাজার ৯৪৬ জন বাংলাদেশ-ভারত ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে: ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী কাতারের আমিরের সফরে যা পেল বাংলাদেশ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে মার্চে চালু হচ্ছে ২টি কারখানা     

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২  

সাগরপাড়ে জেগে ওঠা চর আর পতিত জমিতে গড়ে ওঠা দেশের বৃহৎ শিল্পনগরে কেবল কারখানা চালুর অপেক্ষা। আগামী মার্চে দেশের বৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্প বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে চালু হচ্ছে দুটি কারখানা। চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার এক সময়কার অবহেলিত ইছাখালীর সমুদ্র উপকূলে চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। একের পর এক গড়ে উঠছে শিল্পকারখানা। নির্মাণ হচ্ছে অবকাঠামোসহ নানা স্থাপনা। এতে রং এবং এমএস প্লেট উৎপাদন করতে ২০ মিলিয়ন করে মোট ৪০ মিলিয়ন ইউএস ডলার বিনিয়োগ করেছে প্রতিষ্ঠান দু’টি।

জানা গেছে, চট্টগ্রামের মিরসরাই, সীতাকুন্ড ও ফেনীর সোনাগাজীতে ৩০ হাজার একর জমিতে গড়ে ওঠা দেশের বৃহত্তম শিল্পনগরে আগামী মার্চ থেকে উৎপাদন শুরু করছে বাংলাদেশের ম্যাকডোনাল্ড স্টিল এবং ভারতের এশিয়ান পেইন্টস। এই প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) আবদুল্লাহ আল মাহমুদ ফারুক জানিয়েছেন, আগামী মার্চে প্রথমবারের মতো উৎপাদন শুরু করতে যাচ্ছে এশিয়ান পেইন্টস। প্র্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই কারখানা উদ্বোধনের কথা রয়েছে। এ ছাড়াও আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের বড় ধরনের পরিবর্তনের কর্মযজ্ঞ চলছে এই শিল্পনগরে। প্রথম কারখানা উৎপাদনে যাওয়া দেশের অর্থনীতির জন্য বড় ধরনের সুখবর। এই প্রকল্পে যারা জমি বরাদ্দ নিয়েছেন তাদের অনুরোধ জানাবো তারা যেন দ্রুত কারখানার নির্মাণকাজ শুরু করে। এশিয়ান পেইন্টস সূত্র জানায়, ২০ একর জায়গা জুড়ে এশিয়ার সবচেয়ে বড় রং তৈরির কারখানা স্থাপন করেছে এশিয়ান পেইন্টস। এই কারখানায় রং এবং এর অন্যান্য উপকরণ তৈরি করা হবে।

ম্যাকডোনান্ড স্টিলের প্রজেক্ট ম্যানেজার আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ১০ একর জমিতে ১১৪ কোটি টাকা বিনিয়োগে স্টিল কারখানা নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ। আগামী মার্চে আমরা এই কারখানায় উৎপাদন শুরু করতে পারব বলে আশা করছি। এই কারখানায় এমএস প্লেট তৈরি করা হবে।

সরেজমিন দেখা যায়, পুরোদমে চলছে বেশকিছু শিল্প-প্রতিষ্ঠানের নির্মাণকাজ। এ দিকে পাথরের স্তূপ তো ওই দিকে ইটের স্তূপ। আবার কোন দিকে চোখে পড়ে বালু, খোয়া, রড, স্টিলের স্তূপ। একেকটি প্রতিষ্ঠান নির্মাণে কাজ করছে শ’ তিনেক করে লোক। তারা যে যার কাজে ব্যস্ত। নেই দম ফেলার ফুরসত। একাধিক খননযন্ত্র, ভরাটযন্ত্রে চলছে অবিরাম কাজ। তৈরি হচ্ছে কাঁচামাল রাখার গোডাউন, পাম্প হাউজ, প্রশাসনিক ভবন।

কারখানা নির্মাণের জন্য পূর্বশর্ত হলো বরাদ্দকৃত প্লটগুলো কারখানা নির্মাণের উপযোগী করে প্রস্তুত করা। বেজার দাবি, জোরেশোরেই চলছে প্লটের অবকাঠামো নির্মাণের কাজ। ইতোমধ্যে বেশ কিছু প্লট সম্পূর্ণ প্রস্তুত। যাতায়াত, গ্যাস, বিদ্যুৎসহ যাবতীয় উপযোগ সুবিধা নিশ্চিত হয়েছে কয়েকটি প্লটে। এ প্লটগুলো কারখানা নির্মাণের জন্য প্রস্তুত।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশে শিল্পের বিকাশে এটি বিশাল মাইলফলক। সমুদ্র তীরবর্তী জেগে ওঠা চর এবং পতিত জমি কাজে লাগিয়ে শিল্পাঞ্চল গড়ার স্বপ্ন এখন বাস্তবে রূপ নিচ্ছে। পুরো প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ১৫ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সম্প্রতি, মিরসরাই প্রেস ক্লাবের দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে মিরসরাইয়ের সংসদ সদস্য ও মিরসরাই ইকোনমিক জোনের স্বপ্নদ্রষ্টা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, ৩০ হাজার একরের এ শিল্পাঞ্চলে কর্মসংস্থান হবে প্রায় ১৫ লাখ মানুষের। মিরসরাইয়ের মানুষ আর বেকার থাকবে না। এখানে চাকরির ক্ষেত্রে মিরসরাইয়ের জনগণ অগ্রাধিকার পাবে। তবে শিক্ষা ও দক্ষতার কোনো বিকল্প নেই। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চাকরি পাওয়ার পূর্বশর্ত হিসেবে তিনি মিরসরাইয়ের জনগণের প্রতি দক্ষতা অর্জনের আহবান জানান।

এমপি পুত্র আইটি বিশেষজ্ঞ মাহবুবুর রহমান রুহেল বলেন, মিরসরাই হবে আগামীর সিঙ্গাপুর। মিরসরাইয়ের জনগণকে শ্রমবাজারে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে উপজেলাজুড়ে বেশ কিছু টেকনিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হবে।
বেজা সূত্র জানায়, বর্তমানে প্রায় ছয় হাজার একর জমি ইতোমধ্যে মাটি দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। সড়ক, সেতুসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন নির্মাণাধীন কারখানায় গ্যাস ও বিদ্যুতের লাইন বসিয়ে দিচ্ছে। এছাড়া শিল্পনগরীর ভেতরে রাস্তার জন্য সোলার সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে।

এশিয়ান পেইন্টস এবং ম্যাকডোনাল্ড স্টিল ছাড়াও, হেলথকেয়ার ফার্মাকে ৪০ একর, বাংলাদেশ অটো ইন্ডাস্ট্রিজকে ১০০ একর, এসকিউ ক্যাবলকে ৪০ একর, জিংউয়ানকে ১০ একর, মডার্ন সিনটেক্সকে ২০ একর, নিপ্পন এবং ম্যাকডোনাল্ড স্টিলকে ১০০ একর ও বার্জার পেইন্টসকে ৩০ একর জমিতে তাদের কাজ পরিচালনা করতে দেখা গেছে।

এছাড়া সমুদা ফুডস এবং বার্জার পেইন্টস আগামী বছরের (২০২৩) মধ্যে তাদের কারখানা চালু করার পরিকল্পনা করছে। বিশেষ জোনগুলোর মধ্যে, এক হাজার ১৫০ একরের বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণকাজ শুরু করেছে। অন্য দিকে ৫০০ একরের বিজিএমইএ গার্মেন্ট ভিলেজ এবং ৫০০ একরের এসবিজি অর্থনৈতিক অঞ্চলেও মাটি ভরাট করে কারখানা নির্মাণের উপযোগী করা হয়েছে। বসুন্ধরা গ্রুপ দ্রুতই তাদের ৫০০ একরের জোন প্রস্তুত করছে।
বেজার সহকারী প্রকৌশলী ফেরদৌস ওয়াহিদ বলেন, আমরা ইতোমধ্যেই নির্মাণাধীন কারখানার জন্য গ্যাস ও বিদ্যুৎ নিশ্চিত করেছি। আপাতত কারখানাগুলোতে ভুগর্ভস্থ পানি সরবরাহ করা হবে।

মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে দেশী-বিদেশী অনেক নামীদামি প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করছে। বিদেশী বিনিয়োগকারীদের মধ্যে রয়েছে জাপানের নিপ্পন, ভারতের এশিয়ান পেইন্টস, যুক্তরাজ্যের বার্জার পেইন্টস ও সিঙ্গাপুরের উইলমার। আর দেশী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে পিএইচপি, বসুন্ধরা গ্রুপ ও টিকে গ্রুপ।

বার্জার বাংলাদেশ এখানে তাদের তৃতীয় এবং সবচেয়ে বড় কারখানা স্থাপন করতে চায়। এ জন্য তারা বিনিয়োগ করবে ২০০-২৫০ কোটি টাকা, যে কারখানার কাজ পাঁচ বছরের মধ্যে সমাপ্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

উত্তরা মোটরস লিমিটেড এই শিল্পনগরে গাড়ি অ্যাসেম্বলিং ও প্রস্তুতের জন্য গত ২৪ মার্চ ৫০ একর উন্নত জমির ইজারা চুক্তি করেছে। প্রতিষ্ঠানটি এখানে ৩৩ দশমিক ৬৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের মাধ্যমে সুজুকি ব্র্যান্ডের গাড়ি অ্যাসেম্বলিং ও প্রস্তুতের পরিকল্পনা করেছে।

দেশী-বিদেশী আরো যেসব প্রতিষ্ঠান এখানে বিনিয়োগ করে জমি বরাদ্দ পেয়েছে, সেগুলোর মধ্যে আছে বেইজিং ঝেনুয়ান হেংহুই ইঞ্জিনিয়ারিং কনসাল্টিং কোম্পানি, পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি, বিএসএ ফ্যাশনস লিমিটেড, হাংঝু ঝিনঝিয়াং গ্রুপ, ঝিন্দে ইলাস্টিক (বিডি), এক্সপোর্ট কম্পেটিটিভনেস ফর জবস, ইস্ট এশিয়ান কক্স, কমফিট কম্পোজিট নিট, ইওন মেটাল ইন্টারন্যাশনাল, ট্রেড ডিজাইন সল্যুশনস, ইয়নমেটাল লিমিটেড, ফন ইন্টারন্যাশনাল ও আরব বাংলাদেশ ফুডস লিমিটেড। এ ছাড়া বরাদ্দ পেয়েছে গ্যাস ওয়ান লিমিটেড, অনন্ত অ্যাপারেলস লিমিটেড, বিপি-পাওয়ারজেন লিমিটেড, এসিআই লিমিটেড, ইনট্রিগা অ্যাপারেলস লিমিটেড, হ্যামকো করপোরেশন লিমিটেড, যমুনা স্পেসটেক (জেভি) লিমিটেড, বিএসআরএম স্টিল মিলস লিমিটেড, চিটাগং পাওয়ারসহ অনেক প্রতিষ্ঠান।

উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর তথা মিরসরাই ইকোনমিক জোন দেশের সর্ববৃহৎ ও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহত্তম শিল্পনগরী। এটি চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার ইছাখালী ইউনিয়নের সাধুরচর, শীলচর, মোশাররফচর ও পীরেরচর এবং ফেনীর সোনাগাজী ও চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড অংশের বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলের ৩০ হাজার একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত।

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –