• শুক্রবার ০৪ অক্টোবর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ১৯ ১৪৩১

  • || ২৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

‘এ আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করা যায় না’

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২ ডিসেম্বর ২০২৩  

দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ঢাকা-কক্সবাজার রুটে প্রথম বাণিজ্যিক ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। শুক্রবার দৃষ্টিনন্দন ও ঝিনুক আকৃতির কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশন থেকে ঢাকার পথে রওনা হয়েছে ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’ নামে ট্রেনটি। এ ট্রেনে যাত্রী হয়েছেন এক হাজারের বেশি মানুষ। এমন আনন্দঘন মুহূর্তের সাক্ষী হয়ে অভিভূত সবাই। তারা বলছেন- এটি এক অন্যরকম অনুভূতি। যা ভাষায় প্রকাশ করে বোঝানো যায় না।

দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ ও স্বপ্নের ট্রেনযাত্রায় অংশ নিতে পেরে সবাই বেশ উচ্ছ্বসিত। যাত্রীরা অনুভূতি প্রকাশের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতাও জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন ওয়ার্কার্স ফেডারেশন কক্সবাজার জেলা শাখার সভাপতি মনির হোসেন বলেন, কক্সবাজার থেকে ঢাকাগামী প্রথম ট্রেনের যাত্রী হতে পেরে খুব ভালো লাগছে। এর মাধ্যমে দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হলো। এ আনন্দ প্রকাশের ভাষা নেই। আমাদের স্বপ্ন পূরণ করায় আমরা কক্সবাজারবাসীর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও কর্মকর্তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।

ট্রেন চালুর সুফল তুলে ধরে ট্রেনের এক যাত্রী বলেন, কক্সবাজারে ট্রেন চালু ও দৃষ্টিনন্দন রেলস্টেশন নির্মাণ করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই। প্রথমবার কক্সবাজার থেকে সরাসরি ট্রেনে ঢাকায় যাওয়ার সুযোগ পেয়ে আমরা গর্বিত। ট্রেন চালু হওয়ার মাধ্যমে কক্সবাজারের পর্যটন খাত সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় কক্সবাজারে পর্যটকদের আনাগোনা বাড়বে। বাসে দীর্ঘ ভ্রমণ ও যানজটের কারণে অনেক সময় নষ্ট হয়। ফলে পর্যটকরা কক্সবাজারের অনেক স্থান ঘুরে দেখতে পারেন না। এখন আর সেসব সমস্যা থাকবে না।

আরেক যাত্রী বলেন, ট্রেন চালুর মাধ্যমে কক্সবাজারে পর্যটক আগের চেয়ে অনেক বাড়বে। এছাড়া নতুন আইকনিক রেলস্টেশনও একটি দর্শনীয় স্থান হয়ে উঠবে। কক্সবাজার থেকে ট্রেনে সরাসরি ঢাকা যেতে পারবো এটা কখনো কল্পনা করতে পারিনি। কক্সবাজারবাসীকে এত বড় উপহার দেওয়ার জন্য আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনেক ধন্যবাদ জানাই।

মানসিব মহিউদ্দিন নামে এক যাত্রী বলেন, নতুন রেলপথ, নতুন রেলস্টেশন, নতুন ট্রেন। স্টেশন ছাড়ার পর ফাঁকা মাঠ, এরপর পাহাড়ের মধ্য দিয়ে ট্রেন ছুটে যাবে। এ দৃশ্য নিজের চোখে দেখাই অন্যরকম এক অনুভূতি। ট্রেন চলাচলের কারণে কক্সবাজারের পর্যটন আরো উন্নত হবে। আমরা আশা করি, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ নতুন স্টেশন ও ট্রেনের যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ করবে। যাত্রীদের নিরাপদ ও আরামদায়ক যাত্রা নিশ্চিত করবে।

এর আগে, শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকার উদ্দেশে কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশন থেকে ছেড়ে যায় ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’। ট্রেনটি বিকেল ৩টা ৪৫ মিনিটে চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে প্রবেশ করে। সেখানে ২০ মিনিট বিরতি দিয়ে ঢাকার পথে যাত্রা করে ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’। ট্রেনটি রাত ৯টা ১০ মিনিটের দিকে ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশনে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।

কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশনের মাস্টার গোলাম রব্বানী বলেন, ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’ ট্রেনের উদ্বোধনী যাত্রায় যাত্রী হয়েছেন ১ হাজার ৩০ জন।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’ ছাড়বে রাত সাড়ে ১০টায়। চট্টগ্রাম পৌঁছাবে রাত ৩টা ৪০ মিনিটে। ২০ মিনিট যাত্রা বিরতি দিয়ে রাত ৪টায় কক্সবাজারের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। কক্সবাজার পৌঁছাবে সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে। অর্থাৎ রাজধানী থেকে পর্যটন নগরীতে যেতে সময় লাগবে মাত্র ৮ ঘণ্টা ১০ মিনিট। ঢাকা-কক্সবাজার রুটে যাত্রীবাহী ট্রেনের গতিসীমা ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১২০ কিলোমিটার নির্ধারণ করা হয়েছে।

ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত শোভন চেয়ারের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৯৫ টাকা। এসি চেয়ারের ভাড়া ১ হাজার ৩২৫ টাকা, এসি সিটের ১ হাজার ৫৯০ টাকা এবং এসি বার্থের (স্লিপার) ভাড়া ২ হাজার ৩৮০ টাকা। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত শোভন চেয়ারের ভাড়া ২০৫ টাকা, স্নিগ্ধা শ্রেণির ৩৮৬ টাকা, এসি সিটের ৪৬৬ এবং এসি বার্থের ৬৯৬ টাকা।

গত ২৩ নভেম্বর কক্সবাজার এক্সপ্রেসের উদ্বোধনী যাত্রার টিকিট অনলাইনে বিক্রি শুরু হয়। ঐদিন মাত্র এক ঘণ্টায় বিক্রি হয়ে যায় সব টিকিট।

এর আগে, ১১ নভেম্বর দৃষ্টিনন্দন ঝিনুক আকৃতির কক্সবাজার আইকনিক রেলওয়ে স্টেশন ও ঢাকা-কক্সবাজার রেলপথ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ রুটের ট্রেনের নাম ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’ নির্ধারণ করেন তিনিই।

ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে দীর্ঘদিন ধরেই ট্রেন চলাচল করছে। কক্সবাজারকে দেশের রেল নেটওয়ার্কে যুক্ত করতে ২০১৮ সালের জুন মাসে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজারের রামু পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়।

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –