• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে স্থাপিত হবে ৭ মার্চের থ্রিডি ভাষণ

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৯ আগস্ট ২০২২  

তথ্যচিত্র প্রদর্শন, স্মৃতিচারণ আর মূল্যবোধের আলোচনার মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ৪৭তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস স্মরণে বুধবার আলোচনা সভা ও দোআ অনুষ্ঠান হলো আইসিটি টাওয়ারে। হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের আয়োজনে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল মিলনায়তনে আইসিটি বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব এন এম জিয়াউল আলমের সভাপতিত্বে সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকর্ণ কুমার ঘোষ।

অনুষ্ঠানের মুখ্য আলোচক মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি মফিদুল হক বলেন, বঙ্গবন্ধুর অন্তরে ছিলো অসাম্প্রদায়িক বাংলা। তাই তিনি দিল্লীতে অনুষ্ঠিত মুসলিম কংগ্রেসের সম্মেলনে বাংলায় শ্লোগান দেন। শহীদ সোহরাওয়ার্দীর অখণ্ড বাংলা তৈরির প্রস্তাবে ঘোরতর সমর্থক ছিলেন। তবে তিনি শুরু থেকেই পাকিস্তান ও মুসলীগের সমর্থক ছিলেন না। তিনি ছিলেন সোহরাওয়ার্দীর সমর্থক। দেশ ভাগের দিন বঙ্গবন্ধু কলকাতাতেই ছিলেন। বেলিয়াঘাটায় গান্ধী ও সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে প্রতিকী অনশন করেন।

বঙ্গবন্ধু-হত্যা কেন ঘটেছিলো সেই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা বোঝার জন্য হত্যাকাণ্ড-পরবর্তী বিভিন্ন ঘটনাধারার দিকে আমাদের নজর দিতে হবে। এই হত্যাকাণ্ডের পর ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধবিরোধী তথা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয়বিরোধী দক্ষিণপন্থী শক্তি ও ধর্মীয় জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা-গোষ্ঠী। অস্ত্রধারী ঘাতক গোষ্ঠী যখন মেজর জেনারেল খালেদ মোশররফের পাল্টা-অভ্যুত্থানে কিছুটা বেসামাল অবস্থায় পড়েছিল, তখন কারাগারে চার জাতীয় নেতাকে নৃশংসভাবে হত্যা করে দেশত্যাগ করে এবং পাকিস্তানের যোগসাজশে আশ্রয় পায় লিবিয়ায়, মুয়াম্মার গাদ্দাফির তথাকথিত ইসলামি বিপ্লব বা সবুজ বিপ্লবের দেশে।

বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিত্ব ও মূল্যবোধের সঙ্গে তার কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বের সমান্তরাল আলোচনায় তিনি বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর পাকিস্তান আমলের ঋণ পরিশোধে বঙ্গবন্ধু যেভাবে মর্যাদাকর একটি পথে হেটেছিলেন তার কন্যাও পদ্মাসেতু বাস্তবায়নে সেই একই দৃঢ়তা দেখিয়েছেন। তার দূরদর্শীতার কল্যাণেই খুব সাধারণ ভাবেই আমরা আজ প্রযুক্তির সুবিধা পাচ্ছি।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, প্রচলিত ধারণা বিশ্লেষণেই বঙ্গবন্ধুর লেখা কারাগারের রোজ নামচা, আমার দেখা নয়া চীন ও বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী গ্রন্থ তিনটি সবারই পড়া উচিত। এটা কোনো রাজনৈতিক বই নয়। তিনি পৃথিবীর একমাত্র অবিস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব। তিনি ছিলেন সরল। খোদ পাকিস্তানের গোয়েন্দা প্রতিবেদনে তার ত্রুটি দেখানো হয়নি।

তিনি আরো বলেন,  যে মানুষ মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকেন তাকে কেউ মারতে পারে না। বঙ্গবন্ধু সবসময় মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকতেন। মৃত্যুকে ভয় পেতেন না। বঙ্গবন্ধুকে দৈহিকভাবে হত্যা করলেও ঘাতকেরা তার আদর্শকে মারতে পারেনি।

কিছুদিন আগে স্কুলগামী ছেলের কর্দমাক্ত রাস্তার ভিডিও লাইভ করে মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের পরবর্তী সময়ে আমরা এটা চিন্তাও করতে পারতাম না।

পলক বলেন, বঙ্গবন্ধুর পরিবার বা রাজনীতির উত্তরসুরীদের হত্যা করার মধ্য দিয়ে দেশে সার্বভৌমত্ব নস্যাৎ করার অপচেষ্টা হলেও আজ বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ হয়ে উঠেছে।

বঙ্গবন্ধুর আদর্শ কর্মে পরিণত করতে তার বৈষম্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়ে তুলতে সরকার প্রযুক্তিকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণ করা হবে। তিনি বলেন বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল বৈষম্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলা।  বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক, বৈষম্য মুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা ২০০৮ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকল্প দিয়েছিলেন। তিনি বলেন বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র ডিজিটাল বাংলাদেশের আর্কিটেক্ট সজীব ওয়াজেদ এর অনুপ্রেরণায় গত ১৩ বছরে প্রযুক্তির শক্তিকে কাজে লাগিয়ে শহর-গ্রাম, ধনী-দরিদ্রদের মধ্যে কিছুটা হলেও বৈষম্য দূর করা সম্ভব হয়েছে। নারী-পুরুষের বিভেদ, বৈষম্য দূর করার চেষ্টা আমরা চালিয়ে যাচ্ছি।।

এগিয়ে যাওয়ার পথে এখন সবচেয়ে বড় বাধা দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও মাদক উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদেরকে প্রযুক্তি শিক্তিতে প্রগতির পথে চলতে প্রত্যেকের কর্মে বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক আদর্শ ধারণ করতে হবে।

প্রযুক্তির মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে আইসিটি বিভাগের নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরে জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, শিগগিরই আমরা বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের হলোগ্রাফিক থ্রিডি ভাষণের একটি বুথ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে স্থাপন করা হবে। একইসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের ওপর একটি ভিআর তৈরি করা হবে। তৈরি করা হচ্ছে ভিডিও চিত্র রাসেল সোনা।

বক্তব্যের ফাঁকে ফাঁকে মুজিব আমার চেতনা ও মুজিব চীরঞ্জীব শীর্ষক তথ্যচিত্র দেখানো হয়। শুরুতেই পবিত্র ধর্মগ্রন্থ হতে পাঠ, ১৫ আগস্টে শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের উদ্দেশ্যে এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে আইসিটি বিভাগ ও এর আওতাধীন দপ্তর-সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারিগণ উপস্থিত ছিলেন।

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –