• রোববার ১৬ জুন ২০২৪ ||

  • আষাঢ় ২ ১৪৩১

  • || ০৮ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৫

সুপারির খোল দিয়ে তৈরি হচ্ছে বাহারি তৈজসপত্র

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২২ মে ২০২৪  

ফেলে দেওয়া সুপারির খোল দিয়ে তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন প্রকার তৈজসপত্র। এক সময় সুপারি বাগানে খোল পড়ে স্তূপ হয়ে পঁচে যেতো, ঘন ঘন পরিচর্যা করতে হতো। পড়ে থাকা সেই সুপারি খোল থেকেই এখন তৈরি হচ্ছে থালা, বাটি, ট্রে ও নাস্তার প্লেটসহ আকর্ষণীয় ডিজাইনের পরিবেশবান্ধব তৈজসপত্র। এতে একদিকে পরিবেশবান্ধব তৈজসপত্র তৈরি হচ্ছে, অপরদিকে ক্ষতিকর প্লাস্টিক পণ্য থেকেও রক্ষা পাচ্ছে পরিবেশ। 

বাজারে বিদ্যমান প্লাস্টিকের ওয়ান টাইম বা একবার ব্যবহার উপযোগী প্লেটের বিকল্প হিসেবে পঞ্চগড়ে সারা ফেলেছে সুপারির খোল দিয়ে তৈরি বাহারি তৈজসপত্র।

জেলার বোদা উপজেলার শিমুলতলীতে ইকো বিডি গ্রিন নামে কারখানা গড়ে তুলেছেন নুরুল আলম সেলিম নামে এক উদ্যোক্তা। তার কারখানায় এখন সুপারির খোল দিয়ে তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের ওয়ান টাইম তৈজসপত্র।

জানা গেছে, কারখানাটির মালিক নুরুল আলম সেলিম কর্মসূত্রে ঢাকায় থাকেন। ২০২৩ সালের অক্টোবরে শিমুলতলীতে গড়ে তোলেন সুপারির খোলের তৈজসপত্র তৈরির ইকো বিডি গ্রিন নামে কারখানাটি। কারখানা দেওয়ার পর থেকে জেলার বিভিন্ন এলাকায় সুপারি চাষিদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে সুপারির খোল। গ্রামীণ জনপদে পড়ে থাকা সুপারির খোল দিয়ে বাড়ির উঠোনে শিশুদের খেলার উপকরণ ও গৃহিণীদের জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হলেও সেই সুপারির খোল এখন বাহারি তৈজসপত্র তৈরির কাঁচামাল হয়ে উঠেছে। এ থেকে উৎপাদিত তৈজসপত্র বিক্রি হচ্ছে দেশ-বিদেশে।

বুধবার কারখানা ঘুরে দেখা গেছে, জেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সংগ্রহ করা সুপারি গাছের পাতা কারখানায় স্তুপ করা হয়েছে। সে স্তুপ থেকে সুপারির পাতার নিচের অংশটি কেটে আলাদা করা খোল অংশটি পানিতে ধুয়ে জীবাণুমুক্ত করে রোদে শুকিয়ে নেয়া হচ্ছে। রোদে শুকানো হয়ে গেলে মেশিনে নেয়া হয়। পাতার খোল ছাঁচের মেশিনে বসিয়ে তাপ ও চাপ প্রয়োগ করে নানা আকৃতি দেয়া হয়। কয়েক মিনিটের মধ্যে গোলাকার বাটি, গোলাকার প্লেট, চৌকোনা প্লেট, লাভ প্লেট, চামচ, ট্রেসহ ৮ ধরনের জিনিস তৈরি হচ্ছে। কারখানায় দৈনিক ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ পিস প্লেট, বাটিসহ ৮ ধরনের তৈজসপত্র উৎপাদন হচ্ছে। প্রতি পিস প্লেট, বাটি বিক্রি করা হচ্ছে ৭-১৫ টাকায়। কারখানা ঘিরে কর্মসংস্থান হয়েছে বেশ কয়েকজন বেকার নারী-পুরুষের। খুঁজে পেয়েছেন আয়ের পথ। নারীরা এ আয় দিয়ে তাদের সংসারে স্বামী ও সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ চালাতে পারছেন।  

কারখানার কর্মচারী সোহেল রানা বলেন, বাড়ির পাশে কারখানা হওয়ায় এখানে চাকরি করছি। ভালোভাবে চলছি। কারখানাটি অনেক ভালো। আমার মতো অনেকের কর্মসংস্থান হয়েছে। এ কারখানা ১৫ জন কর্মী রয়েছেন। এদের মধ্যে কয়েকজন জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ঘুরে সুপারির খোল বিক্রির জন্য মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেন। সুপারি চাষিদের কাছ থেকে ঝরে যাওয়া প্রতিটি সুপারির খোল কেনা হয় ২-৩ টাকায়। অনেকে এখন খোল বিক্রি করতে কারখানায় ছুটে আসেন। এতে সুপারির খোল বিক্রি করে গ্রামের নারীরাও টাকা আয় করতে পারছেন।

কারখানায় কাজ করছেন কয়েকজন নারী। তাদের মধ্যে বেলি আক্তার ও কুলসুম বেগম বলেন, এখানে সারাদিন কাজ করি। এখান থেকে যা রোজগার হচ্ছে তা দিয়ে সংসার চালাতে পারছি।

কারখানার পরিচালক ফরিদুল আলম হিরু বলেন, আমরা পরিবেশ বান্ধব সুপারির খোল দিয়ে থালা, বাটি, ট্রেসহ ৮ ধরনের জিনিস বানাচ্ছি। এটা অনেক মজবুত। বাজারের যেসব প্লাস্টিকের প্লেট এনে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ব্যবহার হয়ে থাকে সেগুলো দেখা যায় খুব দুর্বল। একবার হাতে নিলেই ফেটে যায়। আমাদেরটা দু’তিনবার ব্যবহার করলেও সহজে ভাঙবে না। দেখতে সুন্দর ও সহজে পরিবহনযোগ্য। এটি ব্যবহারের পর মাটিতে ফেলে দিলেও পরিবেশের কোনো ক্ষতি করবে না। এটি পঁচে জৈব সার হয়ে যাবে।

ঢাকা থেকে মুঠোফোনে কারখানার মালিক বলেন, আমি তো পঞ্চগড়ে সুপারি, চা, আমসহ বিভিন্ন কৃষি আবাদ করছি। হঠাৎ করে চিন্তা হলো এ ধরনের কারখানা এলাকায় গড়া যায় কিনা। সে চিন্তা থেকেই বোদার শিমুলতলীতে কারখানাটি দেওয়া। বিশেষ করে বাজারে যেসব ওয়ান টাইম প্লাস্টিকের তৈরি থালা ব্যবহার করা হয় তা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। আর সুপারির খোলে তৈরি থালা পরিবেশে কোনো ক্ষতি করে না। তাই এখানে কারখানা বসিয়ে সুপারির খোল দিয়ে বর্তমানে থালা, বাটি, ট্রে ও চামুচসহ ৮ ধরনের আকর্ষণীয় ডিজাইনের তৈজসপত্র তৈরি করছি।

তিনি আরো বলেন, প্লাস্টিক বর্জন করে পরিবেশ সুরক্ষায় এমন আরো কারখানা গড়ে তোলা দরকার। এ কাজে এগিয়ে এলে বেকাররাও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারবে। আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে কোনো রকম রাসায়নিক পদার্থ ছাড়াই ঝরে পড়া সুপারির খোল থেকে এসব তৈজসপত্র তৈরি ও দেশ-বিদেশে বিক্রি করা যাবে।

বোদা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা শাহরিয়ার নজির জানান, বোদা উপজেলার শিমুলতলীতে সুপারির খোল দিয়ে পরিবেশবান্ধব তৈজসপত্র তৈরির ভালো একটি উদ্যোগ। এটি যেমন স্থানীয়ভাবে বেকারদের কর্মসংস্থান তৈরি হবে। পাশাপাশি দেশ-বিদেশেও সুপারির খোলে তৈরি তৈজসপত্রের চাহিদা রয়েছে। এসব পণ্য বিদেশে রফতানি করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব।

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –