শোষণের নীলে সম্ভাবনার হাতছানি

একসময় ইউরোপের চাহিদা মেটাতে রংপুর অঞ্চলের কৃষকদের জোর করে নীল চাষ করতে বাধ্য করত ব্রিটিশরা। ইংরেজ নীলকরদের অমানবিক অত্যাচারে অতিষ্ঠ এ অঞ্চলের চাষিরা বিদ্রোহ করেছিলেন। নীলকরদের অত্যাচারের সাক্ষী হয়ে এখনও অনেক জায়গায় টিকে আছে নীলকুঠির ধ্বংসাবশেষ। এখন দিন পাল্টেছে। নীল চাষে নতুন সম্ভাবনা দেখছেন এ অঞ্চলের কৃষকেরা। এই নীল ইংরেজদের সেই নীল নয়। এই নীলে রক্তের দাগও নেই। একটু বাড়তি উপার্জনের আশায় স্বেচ্ছায় নীল চাষ করছেন তারা।
এদিকে চাষীদের প্রেরণা জোগাতে নিখিল রায় নামে এক যুবক রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের পাশে গঙ্গাচড়া উপজেলার হরকলি ঠাকুরপাড়া গ্রামে ২২ শতাংশ জমিতে প্রতিষ্ঠা করেছেন নীল তৈরির কারখানা। সেখানে শতাধিক নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। আর রংপুর সদর, তারাগঞ্জ, গঙ্গাচড়া ও নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলায় নীল চাষ করছেন কয়েক হাজার কৃষক।
রংপুর সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার ও তারাগঞ্জ থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে গঙ্গাচড়ায় অবস্থিত কারখানায় যাওয়ার পথে সড়কের দুই ধারে বিস্তীর্ণ এলাকায় চোখে পড়ে নীলখেত। নিখিলের নীল তৈরির কারখানায় দেখা গেছে, গ্রামের ২৫-২৬ জন নারী সেখানে নীল তৈরিতে ব্যস্ত।
জানতে চাইলে ঠাকুরটারী গ্রামের গোলাপী রানী বলেন, নিখিল দাদার কাছে প্রশিক্ষণ নিয়ে নীল তৈরিসহ আনুষঙ্গিক কাজ করি। এতে সংসার ভালোভাবেই চলে যায়।
গোলাপী রানীর মতো এই কারখানায় কাজ করে সংসারে সচ্ছলতা ফিরেছে হরকলি এলাকার ময়না বেগম, বিউটি বেগম, ঠাকুরটারীর শোভা রানী, প্রমিলা রানী, প্রভা রানী ও সাবিত্রী বালাসহ অনেকের।
নীল বিদ্রোহের পর নীল চাষ বন্ধ হলেও রংপুর অঞ্চলে নীলগাছ বিলুপ্ত হয়নি। ২০০৫ সাল থেকে রংপুর ও নীলফামারীর বিভিন্ন এলাকায় নীল চাষ হয়। স্থানীয় ভাষায় নীলকে বলে ‘মালখড়ি’। জ্বালানি হিসেবে ব্যবহারের জন্য কৃষকেরা জমিতে নীলগাছ লাগিয়ে রাখতেন। আর বর্তমানে নীল চাষে যুক্ত কৃষকেরা জানেন, গাছের যেকোনো অংশ মাটিতে পড়ে পচে গিয়ে প্রাকৃতিক সারের কাজ করে। নীলগাছ জমির নাইট্রোজেনের মাত্রা ঠিক রেখে উর্বরতা বাড়ায়।
মার্চ মাসের মাঝামাঝি নীলের বীজ বুনতে হয়। নীল অনেকটা ধইঞ্চা গাছের মতো, এতে তেমন যত্নের প্রয়োজন হয় না। বীজ বোনার ৯০ দিন পর পাতা কাটার উপযোগী হয়। জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে নীলের পাতা কাটা শুরু হয়। আগস্ট মাস পর্যন্ত তিনবার গাছ থেকে পাতা কাটা হয়। সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বীজ সংগ্রহের জন্য গাছগুলো জমিতেই থাকে। অক্টোবর মাসে বীজ সংগ্রহ করা হয়। নীলগাছের মাথা থেকে ১৮ ইঞ্চি পর্যন্ত ডাল পাতাসহ কাটতে হয়। পাতা কাটার পর সর্বোচ্চ দুই ঘণ্টার মধ্যে পানিতে জাগ দিতে হয়। বড় চৌবাচ্চায় ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা পাতা জাগ দেওয়ার পর একটি নির্যাস পাওয়া যায়। পরে আরেক চৌবাচ্চায় পাতার সবুজ রঙের গাদকে আড়াই থেকে চার ঘণ্টা অক্সিডাইজেশন করতে হয়।
এই সময় সবুজ রঙের গাদ বাতাসের সঙ্গে বিক্রিয়ায় নীল রঙের গাদে পরিণত হয়। সেটি সাদা মার্কিন কাপড়ে ছেঁকে নেওয়া হয়। এরপর নীল রোদে শুকানো হয় অথবা জ্বাল দেওয়া হয়। এখান থেকে কেক ও গুঁড়া আকারে নীল পাওয়া যায়। নীল তৈরিতে বিভিন্ন ধাপে সময়ের হেরফের হলে নীলের গুণগত মানের তারতম্য ঘটে। নীলগাছের ২৫০ কেজি সবুজ পাতা থেকে এক কেজি নীল পাওয়া যায়।
হরকলি গ্রামের নীলচাষি প্রদীপ কুমার বলেন, নীলগাছ স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে মালগাছ হিসেবে পরিচিত। এই গাছ পাঁচ-ছয় ফুট লম্বা হয়। এগুলো জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হতো। কিন্তু নিখিলের কল্যাণে এখন নীল চাষ করে কৃষকেরা বাড়তি টাকা আয় করছেন।
তারাগঞ্জের বালাবাড়ি গ্রামের কৃষক মতিয়ার রহমান বলেন, প্রতি একর জমির নীলগাছ থেকে প্রায় তিন হাজার কেজি পাতা পাওয়া যায়। নিখিলের কারখানায় প্রতি কেজি পাতা চার টাকা দরে কেনা হয়। এই হিসাবে এক একর জমির নীলগাছের পাতার দাম দাঁড়ায় ১২ হাজার টাকা। তা ছাড়া প্রতি একর জমির শুকনা নীলগাছ জ্বালানি হিসেবে বিক্রি হয় ৯ থেকে ১০ হাজার টাকায়।
ঠাকুরটারী গ্রামের কৃষক ইন্দ্রজিৎ রায় বলেন, এক একর জমিতে নীলগাছের চাষ করেছি। তিন দফায় নীল পাতা বিক্রি করেছি ১৩ হাজার ৩০০ টাকা। জ্বালানি হিসেবে মালগাছ বিক্রি করেছি ৫ হাজার ৮০০ টাকার। আবার যে-সব গাছ আছে, তা বিক্রি করতে পারবো আরও তিন থেকে চার হাজার টাকা। এক একর জমিতে আমার খরচ হয়েছে প্রায় ২ হাজার টাকা।
নিখিল রায় বলেন, আমি এসএসসি পাস করার পর ২০০২ সালে পল্লীচিকিৎসকের কোর্স করি। এরপর নিজ গ্রামে বিনা পয়সায় চিকিৎসাসেবা দেওয়া শুরু করি। ২০০৩ সালে এলাকার অভাবী নারী-পুরুষদের সংগঠিত করে চালু করি হস্ত কুটিরশিল্প প্রশিক্ষণ কল্যাণকেন্দ্র। ২০০৬ সালে ‘এমসিসি বাংলাদেশ’ নামক একটি সংস্থায় নীল তৈরির ওপর প্রশিক্ষণ নিয়ে সংস্থাটির আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায় শুরু করি পাতা থেকে নীল তৈরির কাজ। বর্তমানে আমার কারখানার তালিকাভুক্ত চাষি ৭২০ জন। তারা প্রায় ২৫০ একর জমিতে নীলের চাষ করেন। আরও অন্তত ৩৯০ জন সাধারণ চাষি রয়েছেন। তারা ১২৫ একর জমিতে নীল চাষ করেন।
নিখিল রায় আরও বলেন, প্রতি মৌসুমে আমার কারখানায় প্রায় অর্ধকোটি টাকা মূল্যের নীল তৈরি হয়। শ্রমিকদের মজুরি দিয়ে যে লাভ থাকে, তা জমা হয় সংগঠনের নামে। শ্রমিকদের দুর্দিনে বা প্রয়োজনে ওই টাকা কাজে লাগানো হয়।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ওবায়দুর রহমান মণ্ডল বলেন, ব্রিটিশ আমলে রংপুর অঞ্চলের চাষিরা নীলকরদের অমানবিক অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে নীল চাষ বন্ধের দাবিতে আন্দোলন করেছিলেন। এখন নিখিলের বদৌলতে রংপুর অঞ্চলের অনেক নীলচাষির মুখে হাসি ফুটছে।
– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –- ১০ ডিসেম্বর সমাবেশ করবে না আ.লীগ: ওবায়দুল কাদের
- মোয়ায় ফিরেছে সাইফুলের ভাগ্য, তার কারখানায় কাজ করেন ২৫ নারী-পুরুষ
- লালমনিরহাটে বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস পালিত
- সুন্দরগঞ্জে নাশকতা মামলায় জামায়াত নেতা গ্রেফতার
- সাবিনাদের কঠোর পরিশ্রমকে কুর্নিশ সিঙ্গাপুর কোচের
- আদরেই পূজা চেরির ভরসা
- জুমার নামাজ আদায়ে নারীদের বিধান
- বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস আজ
- ৪৭ ইউএনওর বদলির অনুমোদন দিয়েছে ইসি
- অগ্নিসন্ত্রাস মোকাবিলায় সতর্কতার সঙ্গে কাজ করবে পুলিশ
- নির্বাচন বাধাগ্রস্তকারীদের আইনের আওতায় আনা হবে: হারুন অর রশীদ
- রাজধানী ও আশেপাশের নদী-খাল-বিল সংস্কারের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
- আজ থেকে ইসিতে আপিল করতে পারবেন প্রার্থীরা
- ঘূর্ণিঝড় মিগজাউমের প্রভাবে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি
- সৌরবিদ্যুতের প্রসারে কার্যকরী পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ
- ডেঙ্গু বাড়ার জন্য জলবায়ুর পরিবর্তন দায়ী: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
- গাজায় স্কুলে ইসরায়েলি হামলা, নিহত ৫০
- ইসরায়েলের হত্যাকাণ্ডের বিরোধী বাংলাদেশ: তথ্যমন্ত্রী
- গণতন্ত্র ত্রুটিমুক্ত করতে কাজ করছে আওয়ামী লীগ: ওবায়দুল কাদের
- দেশ রক্ষায় নদী বাঁচানোর আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
- কুয়াশা ভরা মিষ্টি ভোরে
- ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ২ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৬৮২
- কমলা চাষে শিক্ষক দম্পতির লাখ টাকা আয়
- ২৪ ঘণ্টায় পাঁচজনের করোনা শনাক্ত
- সিঙ্গাপুরের জালে দুই হালি গোল বাংলাদেশের
- দিনাজপুরে স্ত্রীর অপারেশন করাতে যাওয়া পথে প্রাণ গেল স্বামীর
- কুড়িগ্রামে কবর খুঁড়তেই বেরিয়ে এলো সাদা কাপড়ে মোড়ানো পুতুল-তাবিজ
- পঞ্চগড়ে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস
- তদন্ত কমিটির মুখোমুখি ক্রিকেটাররাও
- বুবলীকে নিয়ে ‘লজ্জিত’ শাকিব খান
- দক্ষিণ আফ্রিকা ও আফগানিস্তান ম্যাচে যেমন হবে আবহাওয়া
- সেলফি তুলে এক রাতে ২০-৩০ লাখ টাকা আয় করেন ওরি!
- ফজরের সময় জেগে উঠার কার্যকরী কৌশল
- গোয়ায় জয়ার ‘ফেরেশতে’
- অবরোধে বাস চলবে: মালিক সমিতি
- বাংলাদেশ-ভারত একযোগে কাজের জন্য সহযোগিতামূলক প্ল্যাটফর্ম প্রয়োজন
- স্মার্ট গ্যাস মিটারিংয়ের মাধ্যমে দেশের জ্বালানি দক্ষতা বাড়বে
- সালাতুদ দুহা বা চাশতের নামাজের নিয়ম ও ফজিলত
- রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শায়িত হলেন বীরমুক্তিযোদ্ধা সাদুল্ল্যাহ
- গণতন্ত্র ত্রুটিমুক্ত করতে কাজ করছে আওয়ামী লীগ: ওবায়দুল কাদের
- লালমনিরহাটে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে নগদ অর্থ প্রদান
- রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের মনোনয়ন চূড়ান্ত: কাদের
- দিনাজপুরে ধান ক্ষেতে পড়ে ছিল মানব কঙ্কাল
- আজানের পর দোয়া পড়ার ফজিলত
- ‘এ আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করা যায় না’
- বরিশাল হবে শান্তির নগরী: পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী
- সাগরে লঘুচাপ, ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘মিগজাউম’
- দেশে পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা বেশি
- হাতীবান্ধায় এক ছাগলের ৫ বাচ্চা
- অবিশ্বাস্য ডাবল সেঞ্চুরিতে ম্যাক্সওয়েলের যত রেকর্ড