• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
ইসরায়েলের হামলার পর প্রধান দুটি বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল শুরু। ইসরায়েল পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইরানে।

১৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে শুরু হচ্ছে রংপুরে হাইটেক পার্কের কাজ

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৫ মে ২০২২  

অবশেষে সাড়ে চার বছর পর রংপুরে শুরু হচ্ছে হাইটেক পার্কের নির্মাণকাজ। আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২৬ মে) বহুপ্রত্যাশিত এ পার্কের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হতে যাচ্ছে।

জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও তথ্য প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক রংপুর হাইটেক পার্কের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনকাজের উদ্বোধন করবেন বলে জানা গেছে। রংপুর জেলা পরিষদ কমিউনিটি সেন্টারে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয়েছে।

বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (গ্রেড-১) বিকর্ণ কুমার ঘোষ স্বাক্ষরিত একটি আমন্ত্রণপত্রে এসব তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

ভারতীয় অর্থায়নে রংপুরসহ বাংলাদেশের ১২টি জেলায় আইটি/হাইটেক পার্ক স্থাপন প্রকল্পের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে এবার রংপুরে এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হতে যাচ্ছে। কথা ছিল ২০১৮ সালে রংপুরে হাইটেক পার্ক নির্মাণ শুরু হবে। কিন্তু নির্মাণকাজ শুরুর আগেই ২০২০ সালের জুনে এই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়। এ নিয়ে হতাশ ছিল রংপুরবাসী। দীর্ঘ অপেক্ষার পর অবশেষে রংপুর সিটি করপোরেশনের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের খলিশকুড়ি এলাকায় বহুল প্রতীক্ষিত হাইটেক পার্কের কাজ শুরু হতে যাচ্ছে।

এদিকে বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (গ্রেড-১) বিকর্ণ কুমার ঘোষ স্বাক্ষরিত আমন্ত্রণপত্রে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ইতোমধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়িত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের সার্বিক নির্দেশনায় ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার কাজ দৃঢ় প্রত্যয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।

ভিত্তিপ্রস্তর অনুষ্ঠানকে ঘিরে বর্ণাঢ্য কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ। সকাল ১০টায় ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথি হিসেবে ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করবেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। এরপর মোনাজাত শেষে সকাল পৌনে ১১টায় রংপুর জেলা পরিষদ কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের অংশগ্রহণে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।

এতে সভাপতিত্ব করবেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। এ ছাড়া থাকবেন জেলা পর্যায়ে আইটি/হাইটেক পার্ক স্থাপন (১২টি জেলা) প্রকল্প পরিচালক এ কে এ এম ফজলুল হক, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আবদুল আলীম মাহমুদ, রংপুরের জেলা প্রশাসক আসিব আহসান, লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের পরিচালক হুমায়ুন কবীর, বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (গ্রেড-১) বিকর্ণ কুমার ঘোষ প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর আদর্শবিষয়ক তথ্যচিত্র ও ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নপূরণের তথ্যচিত্র এবং প্রকল্পের উদ্যোগে আইটি/হাইটেক পার্ক রংপুরের তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হবে। এ ছাড়া ফ্রিল্যান্সারদের মধ্যে ল্যাপটপ বিতরণ করা হবে।

এদিকে বহুল আকাঙ্ক্ষিত এই হাইটেক পার্ক রংপুরে নির্মিত হলে অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ হবে। সরকারের এই প্রকল্প ঘিরে তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে হাজার হাজার তরুণ-তরুণীর।

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান এবং তথ্যপদ্ধতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক উমর ফারুক বলেন, প্রতিবছর লাখ লাখ তরুণ-তরুণী পড়ালেখা শেষ করছে। তাদের বেশির ভাগই শিক্ষিত বেকার হয়ে থাকছে। যেহেতু রংপুরে ভারী শিল্প-কলকারখানা নেই, সে ক্ষেত্রে আইটিনির্ভর হাইটেক পার্কটি গড়ে তোলা জরুরি। এতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। বিশেষ করে ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে আত্মনির্ভর হতে চাওয়া তরুণ-তরুণীরা বেশি উপকৃত হবে।

এই হাইটেক পার্ক প্রযুক্তিভিত্তিক শিল্পায়ন, তরুণদের কর্মসংস্থান এবং হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার শিল্পের উত্তরণ ও বিকাশে সুযোগের দুয়ার খুলে দেবে বলে জানান বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল ও ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন ড. আবু কালাম মো. ফরিদ উল ইসলাম।

তিনি বলেন, হাইটেক পার্ক বাস্তবায়িত হলে এ অঞ্চলের যুবকরা কাজের সুযোগ পাবে। তারা মেধা দিয়ে এ কাজ করবে। তথ্যের প্রসার ও আইটি বিভাগ আরও প্রসারিত ও জনবান্ধব হবে। ফলে বাংলাদেশে সফটওয়্যার শিল্পের আরও বিকাশ ঘটবে। জাতীয় রাজস্ব আয়ের কেন্দ্রবিন্দুতে এ পার্ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

জানা যায়, দেড় শ কোটিরও বেশি টাকা ব্যয়ে রংপুরে হাইটেক পার্ক স্থাপনের পরিকল্পনা হিসেবে নগরীর খলিশাকুড়িতে প্রায় ৯ একর খাসজমি বন্দোবস্ত করে দেয় রংপুর জেলা প্রশাসন। বিশিষ্ট পরমাণুবিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার নামে এ পার্কের নামকরণের প্রস্তুাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

ইতোমধ্যে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন, মাপজোক ও মাটি পরীক্ষার কাজ শেষ হয়েছে। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে আবাদি জমির বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে স্বপ্নপূরণের ভবনগুলো। নকশানুযায়ী তিনটি ভবনের মধ্যে একটি হবে স্টিল স্ট্রাকচারে তৈরি ৭ তলাবিশিষ্ট ভবন। এ ছাড়া দুটি ৩ তলাবিশিষ্ট ক্যানটিন ও অ্যাস্ফিথিয়েটার ভবন (স্টিল স্ট্রাকচার) এবং ডরমিটরি ভবন (আরসিসি) থাকবে। হাইটেক পার্ক বাস্তববায়নের মধ্য দিয়ে রংপুরে কর্মসংস্থান হবে পাঁচ হাজার তরুণ-তরুণীর।

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ২৫ এপ্রিল সারা দেশের জেলা পর্যায়ে ১২টি হাইটেক পার্ক প্রকল্পের জন্য ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয় অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এর মধ্যে রংপুর হাইটেক পার্কের জন্য সম্ভাব্য ব্যয় ১৫৪ দশমিক ৫৪ কোটি টাকা ধরা হয়। বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ এবং তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগ এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –