• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
যুদ্ধের অর্থ জলবায়ু পরিবর্তনে ব্যয় হলে বিশ্ব রক্ষা পেত- প্রধানমন্ত্রী দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড মেডিকেল কলেজের ক্লাস অনলাইনে নেয়ার নির্দেশ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ‘গণতান্ত্রিক রীতিনীতি না মানলে জনগণই বিএনপিকে প্রতিহত করবে’ লালমনিরহাটে হত্যা মামলায় বিএনপির দুই নেতা কারাগারে

গ্রামে ঘুরে অসহায় নারীদের আত্মনির্ভরশীল করছেন প্রতিবন্ধী রোজিনা 

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৩ মে ২০২২  

গ্রামে গ্রামে ঘুরে অসহায় নারীদের আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তোলার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন রংপুরের পীরগাছা উপজেলার প্রতিবন্ধী রোজিনা আক্তার। তার পরামর্শে শতাধিক নারীর ভাগ্য পরিবর্তন হলেও অর্থের অভাবে রোজিনার ভাগ্যের চাকা আজও ঘোরেনি। একটি সরকারি চাকরির আশায় দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন তিনি।

পীরগাছা উপজেলার কৈকুড়ী ইউনিয়নে দিলালপাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুল মান্নানের মেয়ে রোজিনা আক্তার (২৭)। এক ভাই ও চার বোনের মধ্যে রোজিনা চতুর্থ। জন্মের পর তার শৈশব ছিল অন্য স্বাভাবিক শিশুদের মতোই। মাত্র চার বছর বয়সে পোলিও রোগে আক্রান্ত হয়ে শারীরিকভাবে অক্ষম হয়ে যান রোজিনা। স্বজনরা তাকে বিভিন্ন ডাক্তার-কবিরাজের চিকিৎসা করালেও কোনো কাজ হয়নি। ঠিক মতো হাঁটতে পারেন না তিনি। তবুও দমে যাননি রোজিনা। মা-বাবার আদরের সন্তান রোজিনা যখন স্কুলে ভর্তি হয় তখন অন্য চোখে দেখতেন সহপাঠীরা। খেলতে গেলেও তাকে ডাকতো না সহপাঠীরা। বিষণ্ণ মন ক্লাসে মনোযোগী করে তোলে রোজিনাকে। এরপর প্রাথমিকের গণ্ডি পেরিয়ে ধীরে ধীরে প্রতিবন্ধী রোজিনা মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। এখন চাকরি খুঁজছেন তিনি। বিভিন্ন দফতরে আবেদন করেও মিলছে না কাঙ্ক্ষিত চাকরি।

২০১৪ সালে শিক্ষা ও কর্মসংস্থানে বিশেষ অবদান রাখায় ‘জয়িতা’ মনোনীত হন রোজিনা আক্তার। পরে অনেক আশা নিয়ে সামান্য বেতনে যোগ দেন ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশ নামের একটি বেসরকারি সংস্থায়। গ্রামে গ্রামে অসহায়-দারিদ্র নারীদের আত্মনির্ভরশীল হিসেবে গড়ে তোলার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।

রোজিনা বলেন, প্রতিবন্ধীত্ব কোনো অভিশাপ নয়। তাই প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সম্পর্কে আমাদের মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। আমি জীবনে অনেক বাধার সম্মুখীন হয়েছি। সেগুলো অতিক্রম করেছি। এখন আমার একটা সরকারি চাকরি দরকার। অনেক প্রতিষ্ঠানে আবেদন করেছি। কিন্তু কিছু হচ্ছে না।

রোজিনার বাবা আব্দুল মান্নান জাগো নিউজকে বলেন, মেয়েটা বড় অভাগা। প্রতিবন্ধী না হলে সমাজে অনেক কিছু করতে পারতো। তবুও সে নিজেকে প্রতিবন্ধী ভাবেনি। গ্রামের অনেক নারীর ভাগ্যের পরিবর্তনে কাজ করছে। তার একটা সরকারি চাকরি হলে ভালো হতো।

স্থানীয় কৈকুড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুর আলম মিয়া বলেন, যে দেশে প্রতিবন্ধীরা সমাজে অবহেলিত সে দেশে রোজিনার মতো মেয়েরা গ্রামের আলোকিত মুখ। তাদের পাশে দাঁড়ালে একদিন সমাজের জন্য অনেক কিছু করতে পারবে। তাই রোজিনার একটি ভালো চাকরির জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

এ বিষয়ে পীরগাছা উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা দেলোয়ারা বেগম বলেন, সমাজে রোজিনাদের অবদান অপরিসীম। প্রতিবন্ধী হয়েও তিনি যে কাজ করছেন অনেক সুস্থ মানুষও তা করেনা। আমরা রোজিনাকে ‘জয়িতা’ মনোনীত করেছি। তবে তার একটা সরকারি চাকরি হলে ভালো হয়।

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা এনামুল হক বলেন, একজন মেয়ে প্রতিবন্ধী হয়েও যখন অনার্স-মাস্টার্স সম্পন্ন করেন তখন বুঝতে হবে তার মেধা আছে। যখন সে গ্রামের নারীদের নিয়ে কাজ করে তখন তার কাজের মূল্যায়ন দেওয়া দরকার। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের স্ব-স্ব দক্ষতা অনুযায়ী সরকারি-বেসরকারি ক্ষেত্রে সব প্রতিষ্ঠানে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চাকরির ব্যবস্থা করা দরকার।

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –