• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

সর্বশেষ:
বাংলাদেশকে হুমকির মুখে ফেলেছে ক্রমবর্ধমান জলরাশি: গবেষণা উত্তরবঙ্গের মহাসড়কে চার লেন চালু, ঈদযাত্রা হবে স্বস্তির সব উন্নয়ন সহযোগীদের এক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী বিডিএস ভূমি ব্যবস্থাপনায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে: ভূমিমন্ত্রী বিএনপির নিগৃহীত নেতাকর্মীদের তালিকা দিতে হবে: ওবায়দুল কাদের

টাকার অভাবে ঢাবিতে ভর্তি হতে পারছেন না দিনমজুর ফুলকুমার 

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৪ ডিসেম্বর ২০২১  

বাবার অভাবী সংসার। কিন্তু পড়াশোনা বন্ধ করেননি ফুলকুমার। দারিদ্র্যকে পাশ কাটিয়ে এসএসসি এবং এইচএসসিতে পাস করেন ভালোভাবে। ক্লান্তিহীন ইচ্ছা আর প্রচেষ্টায় এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধাতালিকায় স্থান পেয়েছেন তিনি। কিন্তু সেই ইচ্ছা বা স্বপ্ন কোনোটাই আর সামনে এগোচ্ছে না। অর্থের অভাবে স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে না পারছেন না ফুলকুমার।

গত ২৩ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন ফুলকুমার। ২ নভেম্বর মেধাতালিকায় ৭০ দশমিক ৭৮ স্কোর পেয়ে উত্তীর্ণ হন তিনি। আগামী ৮ ডিসেম্বর তার সাক্ষাৎকার। এ নিয়ে রাজ্যের চিন্তায় ফুলকুমার ও তার পরিবার।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ঘোগাদহ ইউনিয়নের উত্তর চাঁদের খামার গ্রামের কানু রামের ছেলে ফুলকুমার। পরিবারে তার মা আছেন। তিনি অসুস্থ অবস্থায় বিছানায় পড়ে আছেন। তারা তিন ভাই। তিনি সবার বড়।

ফুলকুমার একসময় পাইভেট পড়াতেন। এতে তার পোষাত না কারণ প্রাইভেটে কম টাকা দিত সবাই। পরে বাবার সঙ্গে দিনমজুরির কাজে যোগ দেন। কৃষিকাজের পাশাপাশি ফুলকুমার পড়ালেখাকে আপন করে নিয়েছেন। তিনি স্থানীয় ঘোগাদহ উচ্চবিদ্যালয় থেকে ২০১৮ সালে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ৪.৩৯ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। ২০২০ সালে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে মানবিক বিভাগ থেকে ৪.৫০ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দিনমজুর বাবার ছেলে ফুলকুমার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েও টাকার অভাবে ভর্তি হতে পারছে না। এইচএসসি পাশ করার পর টাকার অভাবে বাহিরে কোন কোচিংয়ে ভর্তি হতে পারেননি। করোনাকালীন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থানীয় কয়েকজন ছাত্র ফুলকুমারকে বিশ্ববিদ্যালয় এর কোচিংয়ের ব্যবস্থা করেছিলেন। এ ছাড়া অর্থসংকট ও তার পড়াশোনার আগ্রহ দেখে কোচিং কর্তৃপক্ষ ঢাকা, রাজশাহী ও গুচ্ছ বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষার যাবতীয় খরচ বহন করেছিল।

ফুলকুমার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মানবিক অনুষদে ১৩৪তম হয়ে অর্থনীতি বিভাগে উত্তীর্ণ হন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায়ও মেধাতালিকায় স্থান পেয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আগামী ৮ ডিসেম্বর সাক্ষাৎকারের জন্য ডেকেছে তাকে। কিন্তু টাকার অভাবে কীভাবে ঢাকা যাবেন এবং ভর্তি হবেন, এখনো জানেন না ফুলকুমার।

ফুলকুমার বলেন, ছোটবেলা থেকে দারিদ্র্যের সঙ্গে যুদ্ধ করে এ পর্যন্ত এসেছি। সব সময় যেসব শার্ট-প্যান্ট পরেছি, তা-ও মানুষের দেওয়া। একটু স্বপ্ন দেখি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হব। পাশাপাশি একটা পার্টটাইম কাজ জোগাড় করে পড়াশোনাটা চালিয়ে যাব। কিন্তু এখন তো ভর্তি হব কীভাবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা। এদিকে টাকার অভাবে মায়ের চিকিৎসাও বন্ধ হয়ে গেছে।

ফুলকুমারের বাবা কানু রাম বলেন, আমার ছেলে ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার প্রতি আন্তরিক ছিল। কিন্তু টাকার অভাবে তাকে কিছুই দিতে পারিনি। নিজ মেধাগুণে বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাচ্ছে। আমি অসহায় আর সন্তানকে পড়ালেখা করাতে পারছি না টাকার অভাবে। দিনমজুরি করে সংসার চালাই। জমি বন্দক রেখে ৯ হাজার টাকা নিয়ে স্ত্রীর চিকিৎসা করিয়েছি। বাকি টাকা তাকে দিয়েছি। টাকার অভাবে স্ত্রীর চিকিৎসাও বন্ধ। এখন তাকে দেব কোথা থেকে? শেষ সম্বল ১০ শতক জমি আছে। এখন তা বিক্রি করা ছাড়া আর উপায় নেই।

ঘোগাদহ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক সরকার বলেন, কানু রাম অত্যন্ত দরিদ্র। দিন এনে দিনে খান। তার ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে, এটা আমাদের ইউনিয়নের জন্য গর্বের বিষয়। ভর্তির বিষয় ও পরবর্তীতে যাতে ভালোভাবে লেখাপড়া করতে পারে, আমরা ইউনিয়নবাসী তাকে সহযোগিতা করব।

কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের উপধ্যাক্ষ মির্জা নাসির উদ্দীন বলেন, ফুলকুমার আমাদের কলেজ থেকে ২০২০ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। এটা আমাদের কাছে অত্যন্ত আনন্দের বিষয়। সে খুবই দরিদ্র পরিবারের সন্তান। কলেজে পড়াকালীন আমরা তার পড়াশোনায় যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা করেছি। সামনে তার ভর্তির সময়ও সহযোগিতা করার চেষ্টা করব ইনশা আল্লাহ।

ফুলকুমারের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে ফুলকুমারের ০১৭৬২৭২৬৯৪৯ এই নম্বরে যোগাযোগ করা যাবে।

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –